আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’, সমুদ্র বন্দরে ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত
সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে আগামীকালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে পরিণত হতে পারে। যা মঙ্গলবার (১১ মে) নাগাদ ভারতের অন্ধ্র উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এর প্রভাব এখনও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পড়েনি। আগামীকাল নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় তাহলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা সুন্দরবন, সাতক্ষীরাসহ আশেপাশের এলাকায় তীব্র ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে বেশি প্রভাব পড়বে ভারতের অন্ধ্র উপকূলসহ আশেপাশের এলাকায়। এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নামটি রেখেছে শ্রীলঙ্কা। ‘অশনি’ শব্দের অর্থ সিংহলি ভাষায় ‘ক্রোধ’।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, লঘুচাপ ইতোমধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামীকালকের মধ্যেই এটি ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে পরিণত হতে পারে। এখনই এর গতিপথ সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ বলছে এটি ভারতের উপকূলের দিকে যাবে। মঙ্গলবারের দিকে এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তিনি জানান, এর প্রভাব এখনও বাংলাদেশে পড়েনি। এখন বাংলাদেশের মৌসুমের কারণে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। আজও তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হচ্ছে, রাতের মধ্যে আরও বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আমরা শুধু সাগরে ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দিয়েছি। নদীবন্দরেও ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এদিকে নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো-হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর মাঝারি ধরণের উত্তাল রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্যও বলা হলো।
প্রসঙ্গত, ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেতের অর্থ হলো- জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার, যা সামূদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
এদিকে নদীবন্দরের জন্য এর দেওয়া বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, টাংগাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কি.মি. বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচণ্ড বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
প্রতিবেশী ভারতের অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতের দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। আজ শনিবার সেটি আরও শক্তি বাড়িয়ে উত্তর-পূর্বে অগ্রসর হবে। এ ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় এরই মধ্যে ভারতের উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যার দিকে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের আকার ধারণ করতে পারে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আগামী মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় অশনি ভারতের উত্তর অন্ধ্র–ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অশনি’র প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।
এরই মধ্যে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর, সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে সমুদ্রে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা।