বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

হামাসের সামরিক কমান্ডার দেইফকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ১৫ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল–কাসেম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে, গত ১৩ জুলাই গাজার খান ইউনুসে বিমান হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বলা হয় তাকে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার উত্থান-পতন ও হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কাহিনি।
দেইফের জন্ম ১৯৬৫ সালে, খান ইউনুস শরণার্থী শিবিরে। ১৯৪৮ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই শরণার্থী শিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। দেইফের নাম ছিল মোহাম্মদ মাসরি। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের সময় তিনি হামাসে যোগ দেন। তখন থেকে তিনি মোহাম্মদ দেইফ নামে পরিচিত হন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন দেইফ। সেখানে তিনি পদার্থ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তবে বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। এমনকি মঞ্চেও অভিনয় করেছেন দেইফ।
হামাসের এক সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন দেইফ। তখন ১৬ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম বিগ্রেডের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন তিনি। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন দেইফ। এ ছাড়া তিনি হামাসের বোমা বানানোর প্রকল্পে ভূমিকা রেখেছেন। তবে সচরাচর প্রকাশ্যে আসতেন না দেইফ। ৫৮ বছর বয়সী দেইফ খুবই কম কথা বলতেন। প্রকাশ্যে খুব বেশি আসতেন না।
কয়েকদশক ধরে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় দেইফের নাম ছিল। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একাধিকবার হত্যাচেষ্টায় দেইফ একটি চোখ হারান। সেই সঙ্গে পায়ে গুরুতর আঘাত পান। ২০১৪ সালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দেইফের স্ত্রী, সাত মাস বয়সী ছেলে এবং তিন বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যু হয়।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার জন্য দেইফ ও তার দুই সহযোগীকে দায়ী করে ইসরায়েল। তবে হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড তিনিই ছিলেন।
মূলত ২০২১ সালের মে মাসে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান-জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আরব ও মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভের জন্ম দেয়। ওই সময় থেকেই ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনা শুরু করেন দেইফ। গত ৭ অক্টোবরের ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২ হাজার ৭০০ জনের বেশি আহত হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রমজানে আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের তাণ্ডব, মুসল্লিদের মারধর, হামলা, বয়স্ক ও তরুণদের টেনেহিঁচড়ে বের করার ছবি ও ফুটেজ হামলার পরিকল্পনার দিকে নিয়ে যায়। এগুলো আগের ক্ষোভকে আরও উসকে দেয়। মসজিদে তাণ্ডবের ঘটনায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ওই সময় ১১ দিনের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলাটি ১৯৭৩ সালের পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। পরিণতিতে ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করে। গাজায় পালটা অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৪৮০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯১ হাজার ১২৮ জন আহত হয়েছে। হতাহতের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, নারী ও শিশু।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর