ব্রিকসের সদস্য না হলেও অংশগ্রহণ করাটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক

ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়ায় বাংলাদেশের তেমন কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী নতুন মেরুকরণে ব্রিকস জোট এখনও খুব বেশি শক্তিশালী না হলেও জোটে থাকা ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে কতটা একমত হতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ব্রিকস ও জি-২০ এর মতো জোটের আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে, তা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যুতে মতৈক্য না থাকা বিশ্বে দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘ব্রিকস ও জি ২০-রাজনীতিতে বার্তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। বৈঠকে অংশ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘ব্রিকসের সদস্য পদপ্রার্থী বাংলাদেশ ছাড়াও বড় বড় দেশ ছিল; ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম তারাও ক্যান্ডিডেট ছিল। অনেকেই বলছিল তাদের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কিন্তু তারাও হয় নাই। তাই এটাকে নিয়ে বাংলাদেশের খুব একটা খারাপবোধ করার কিছু নেই।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হোসেন চৌধুরী বলেন, একদিন আমরা এটার সদস্য হবো। এর সদস্য হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা দরকার তার সবই বাংলাদেশের আছে। তাই এবার হতে পারিনি বলে আক্ষেপের কিছু নেই। গণতন্ত্র নিজ গতিতে কাজ করবে। তার জন্য আপনাকে পজিটিভ থাকতে হবে, কাজ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যেই পরিচিতি শুধু ব্রিকস নয়, এর আগে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জি-১০ এ গিয়েছেন। সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে জি-২০ তে যাবেন। এই যে আমাদের পরিচিতি বাড়ছে, সেটা তো একটা বড় জিনিস আমাদের জন্য।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের এক্সপেকটেশন ম্যানেজমেন্টে একটা ভুল হয়েছে সজ্ঞানে, সেটা মানতেই হবে। কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী গেলেন, যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে আউটকামটা আসেনি। সৌদি আরবসহ আরও অনেকে যায়নি। অথচ তাদের মেম্বারশিপ দেওয়া হলো। কিন্তু আমাদের দাওয়াত করে নিয়ে যাওয়া হলো, আর মেম্বারশিপ দেওয়া হয় নাই। এটা একটা অপমান আমি বলবো। তাই আমাদের নিজেদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে, আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে অর্থনৈতিকভাবে এবং পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে।
ব্রিকস জোটে কোনও ধারাবাহিকতা নেই মন্তব্য করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের মতো একটি দেশ যে কারও সঙ্গে ঝগড়া করে থাকতে পারবে না। সেটা চীন হোক, ভারত হোক, আমেরিকার কিংবা যেই হোক। এটা করলে আমরা নিজেদের ক্ষতি করবো।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আমার মনে হয়, আমাদের ভালো করে দেখা দরকার ব্রিকসে আমাদের কী কী অর্থনৈতিক লাভ রয়েছে এবং যুক্ত হলে কতটুকু লাভ আনতে পারবো। জি-২০ তে থেকে কতটুকু পেয়েছি আবার কোথাও না গেলে কী লাভ, সেটাও ভেবে দেখতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আব্দুর রব খান বলেন, এটা আমাদের জন্য লসের কিছু না। যেভাবে হোক, আমরা এটার একটা অংশ হবো। বরং আমার মনে হয় না যে তারা আন্তর্জাতিক সিস্টেমে বড় পরিবর্তন আনতে পারবে। বরং ডিফিউজ হয়ে যাবে। কারণ পরবর্তী প্রশ্ন আসবে একে নেও, ওকে নেও। এটা ওটা করো। আবার নরেন্দ্র মোদি যে প্রিন্সিপালটা দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলে নেওয়া যাবে না। এটা কোনও মানে রাখে না। বরং এটা (ব্রিকস) আরও মলিন হবে যদি না বড় কিছু করে দেখাতে পারে।
এনটিভির বার্তা প্রধান সাংবাদিক জহিরুল আলম বলেন, অনেকে বলছেন বাংলাদেশ কেন কোয়ালিফাই করেনি, পার্শ্ববর্তী দেশের একটা মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরব কোয়ালিফাই করেছে আর্জেন্টিনা করেছে। তারা এই সদস্য হওয়ার যে মানদণ্ড; তা কীভাবে পূরণ করলো তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেজন্যই আমি বলছি বৈশ্বিক রাজনীতি বিভক্ত।