বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪১ অপরাহ্ন

৯৯৯-এ আসছে অটোকলার, অপ্রয়োজনীয় কলে জেল-জরিমানা

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৪৭ বার
আপডেট : রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

দেশে অল্প সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পাওয়া সেবার নাম ‘জাতীয় সেবা ৯৯৯’। এখানে ফোন করলেই পুলিশি সেবাসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পৌঁছে যায় নাগরিকের হাতের নাগালে।এবার বিরক্তিকর কল এড়াতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবার যুক্ত হচ্ছে ‘অটোকলার’। এখন থেকে কেউ ৯৯৯-এ বিরক্তিকর কল দিলেই তার বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বিরক্তিকর কলারের ছয় মাসের জেল বা এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিচার করা হতে পারে।

পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে অভিযোগ করার চেয়ে ‘৯৯৯’ এ অভিযোগ জানাতেই বেশি আগ্রহী। জরুরি সেবার এই নম্বরে ভুক্তভোগীরা যেমন ফোন করে অভিযোগ করেন, আবার এমনও ঘটেছে চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে পিটুনি খাওয়ার ভয়েও ফোন করে পুলিশি সেবা চাওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সেবাটিতে অনেকে মজা করেও ফোন করছেন। আবার অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়েও বিভ্রান্তি করেছেন। জাতীয় এই সেবায় যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে পাওয়া রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গেছে, ৯৯৯-এ অপ্রয়োজনীয় ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছে এমন কলের পরিমাণ মোট কলের অর্ধেকের বেশি। গত পাঁচ বছর দুই মাসে এমন অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে দুই কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৯টি; যা মোট কলের ৫৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এসব কলের মধ্যে ‘বিরক্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৩ লাখ ১১ হাজার ৯৬৫টি কলকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার বিরক্তিকর কল এড়াতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবার যুক্ত হচ্ছে ‘অটোকলার’। অপ্রয়োজনে ও মজা করার জন্য যেসব কল আসে, সেগুলোকে এই ধরনের কল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অটোকলার যুক্ত হলে গ্রাহক ৯৯৯-এ ফোন করলেই তার লোকেশন ও পরিচিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চলে আসবে কর্তৃপক্ষের কাছে। ৯৯৯ শুধু গ্রাহকের সমস্যা শুনবে এবং দ্রুত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবে। ৯৯৯-এ অটোকলার যুক্ত হওয়ায় বিরক্তিকর কল কমে যাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

৯৯৯-এর এক কর্মকর্তা বলেন, সত্যিকারের বিপদগ্রস্তদের দ্রুত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অটোকলার চালু করা হচ্ছে। এতে অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা তথ্য বা বিরক্তিকর কল কমে যাবে। ৯৯৯ চালুর পর থেকে অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন তা অনেক কমে আসছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯৯৯-এর কর্মী বাহিনী দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণকে নির্বিঘ্নে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের সব মহানগর এলাকায় মোবাইল ডাটা টার্মিনাল (এমডিটি) ও থানা ডেসপাস সিস্টেম (টিডিএস) চালু করার ফলে সেবাটি আরও সহজ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালুর পর থেকে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে জাতীয় এই সেবাটি। এই সেবার মতো এতো তাড়াতাড়ি আর কোনও সেবা পেরেছে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে সারাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছে ৯৯৯ সেবাটি। গত পাঁচ বছর দুই মাস বয়সে ৯৯৯-এ সরাসরি সমাধান যোগ্য কলের মধ্যে পুলিশ সার্ভিস দেওয়া হয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫টি, ফায়ার সার্ভিস এক লাখ ২৭ হাজার ১৭১টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এক লাখ ১২ হাজার ৫৭৬টি।

৯৯৯ এর কল তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেবা চেয়ে কল এসেছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬১টি। এরমধ্যে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮২টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। এসব কলের বিপরীতে ৭৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ পুলিশি সেবা, ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস সেবা এবং ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে- এক কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৬২২টির কলারকে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। যা মোট কলের ৪১ দশমিক ২০ শতাংশ।

পাশাপাশি ৯৯৯-এ অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছে। অপ্রয়োজনীয় ও মিথ্যা তথ্যও দিয়েছে এমন কলের সংখ্যা মোট কলের অর্ধেক (যা সঠিক তথ্যের দ্বিগুণ) ছিল। গত পাঁচ বছরে ৯৯৯-এ ২ কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৯টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। যা মোট কলের ৫৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরমধ্যে বিরক্তিকর কল ছিল ২৩ লাখ ১১ হাজার ৯৬৫টি।

২০২১ সালের ১ জুলাই বিরক্ত করার কলের জন্য দণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ধারা ৭০ (১) সংশোধন করা হয়। এই আইনে ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণ ছাড়া কল দিলে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এমনকি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিরক্তিকর কলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বিরক্তিকর কল কমে গেলে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে অন্যদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। অনেকে ছিনতাই, দুর্ঘটনা, আগুনসহ বিভিন্ন বিপদে পড়ে ৯৯৯ এ কল দেন। আবার অনেক অপরাধী অপরাধ করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান। ভুক্তভোগীরা অনেক সময় ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলতে পারেন না বা ঘটনার শিকার হওয়ার কারণে নির্বাকও হয়ে যান।

৯৯৯ সেবা বর্তমানে একসঙ্গে ৮০টি কল রিসিভ করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কল আসছে। এর মধ্যে সার্ভিসযোগ্য কল আসছে ৪১ শতাংশ। ৯৯৯ এ একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে ৪৩০ জন কর্মী জনগণের সেবায় কাজ করছেন। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে ৯৯৯-কে অটোমেশন করা হচ্ছে। এটি চালু হলে সময় কমে যাবে, দ্রুত সার্ভিস দেওয়া যাবে। রেন্সপন্স টাইম যত কম লাগবে, ততই দ্রুত জনগণকে সেবা দেওয়া যাবে। ট্রিপল নাইনের মূল লক্ষ্য জনগণকে অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া।

জাতীয় সেবা ৯৯৯ সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা বেশি উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, ৯৯৯-এ মানুষের আস্থা বাড়ছে। বাড়ছে সেবার মানও। ট্রিপল নাইনে কল করার সঙ্গে সঙ্গে মিলছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ বিভিন্ন সেবা। কল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্রুত সেবাটি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি। তবারক উল্লাহ বলেন, ৯৯৯-এর প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েই চলছে। জনগণ যখনই বিপদে পড়ে তখনই ৯৯৯-এ ফোন দিচ্ছে। আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে জনগণকে সেবাটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত কল আমরা পাচ্ছি। এতে ভুক্তভোগীদের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ জন্য অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা বা বিরক্তিকর কল এড়াতে অটোকলার সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এতে সত্যিকারের ভুক্তভোগীদের আরও দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর