২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলার ওই ঘটনায় আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন; আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী।
আজকের প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই যে এই হামলা হয়েছিল এবং তাতে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতাদের যে প্রত্যক্ষ মদদ ছিল তা মামলার তদন্তে উঠে আসে।
এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রের ৫২ জন আসামির মধ্যে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি আগেই কার্যকর হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের দায়ে। আর সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। সে কারণে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার রায় থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়।
২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর যে রায় দেয়, তাতে ৪৯ আসামির মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় আদালত।দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত ১৫ অগাস্ট মারা যান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এনএসআইর সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম।
সব প্রস্তুতি শেষে মামলাটি এখন হাই কোর্টে আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে।
২১ অগাস্ট: বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, তারেকের যাবজ্জীবন
রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ২১ অগাস্টের হামলা: বিচারক
পলাতক আসামিরা
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডিতদের মধ্যে ৩৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন; ১৫ জন পলাতক।
সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মো. ইকবালকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব, যিনি হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে যুক্ত বলে তাদের ভাষ্য।
পলাতক আসামিরা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান (যাবজ্জীবন), সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (যাবজ্জীবন), কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (যাবজ্জীবন), অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (২ বছর কারাদণ্ড), ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন আহমদ (২ বছর কারাদণ্ড), হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ (মৃত্যুদণ্ড), জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন (মৃত্যুদণ্ড), মহিবুল মুত্তাকিন (যাবজ্জীবন), আনিসুল মোরসালিন (যাবজ্জীবন), মোহাম্মদ খলিল (যাবজ্জীবন), মাওলানা লিটন (যাবজ্জীবন), জাহাঙ্গির আলম বদর (মৃত্যুদণ্ড), মুফতি শফিকুর রহমান (যাবজ্জীবন), মুফতি আব্দুল হাই (যাবজ্জীবন) ও রাতুল আহমেদ বাবু (যাবজ্জীবন)।
হারিছ চৌধুরী ও শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, পলাতক আসামিদের মধ্যে ৬ জনকে ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছিল। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও সাবেক সাংসদ কায়কোবাদের নোটিস সরিয়ে নেয় ইন্টারপোল।ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে যে চারজনের রেড নোটিস এখনো ঝুলছে তারা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দীন, হারিছ চৌধুরী, রাতুল আহমেদ বাবু ও মোহাম্মদ হানিফ।
কোভিডে মৃত্যু দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি আব্দুর রহীমের
২১ অগাস্ট মঞ্চে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন ইকবাল: র্যাব
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় এক যুগ ধরেই যুক্তরাজ্যে রয়েছেন সপরিবারে। তাকে ফেরত আনতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে সরকার বলেছে।
পলাতকদের মধ্যে তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা পাকিস্তানে, রাতুল দক্ষিণ ইতালি বা আফ্রিকায়, হারিছ চৌধুরী ভারত ও মালয়েশিয়ায় ঘুরে ফিরে অবস্থান করছেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে, হানিফ থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়ায়, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে ও সাইফুল জোয়ারদার কানাডায়, জঙ্গি আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
তবে পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশসহ পুলিশের কোনো ওয়েবসাইটেরই ওয়ান্টেড তালিকায় ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার দণ্ডপ্রাপ্তদের ছবি বা পরিচিতি নেই।
পুলিশের ওয়েবসাইটের তালিকায় বহু বছর আগে প্রকাশিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে কয়েকজনের ছবি ও পরিচিতি রয়েছে। কোনো ওয়েবসাইটে কেন তাদের তথ্য নেই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এআইজি সোহেল রানার উত্তর মেলেনি।