২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেইনি বলে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেইনি বলে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। দেশ বিক্রি করে তো আমি ক্ষমতায় আসবো না, এটাই বাস্তব।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম। বিশ্ব খাদ্য দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য- আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, ভালো উৎপাদনই ভালো পুষ্টি, ভালো পরিবেশই উন্নত জীবন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দেইনি বলেই আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হলো না। বৃহৎ দুটি দেশ আর প্রতিবেশি দেশের চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। সেসময় ক্ষমতায় না আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমার কথা ছিল- আগে আমার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ হবে, অন্তত ৫০ বছরের মজুত থাকবে। তারপর যেটা অতিরিক্ত থাকবে সেটা আমি বেচতে পারি। তাছাড়া এই দেশের সম্পদ আমি বেচতে পারি না। এই কথা আসলে একটা বিশাল দেশ আমেরিকা আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পছন্দ হয়নি। কাজেই আমি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
খাদ্য উৎপাদন ও কৃষির আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহামারি শুরুর দিকেই আমি আহ্বান জানিয়েছি যে, আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। সারাবিশ্বের অনেক দেশে এখন খাদ্যের অভাব। অনেক দেশ দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। জাতির পিতার ভাষায় বলতে হয়, বাংলাদেশের মাটি আছে, মানুষ আছে, আমরা যেনো খাদ্যের অভাবে আর কখনও না ভুগি। উত্তরবঙ্গ আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই মঙ্গা মুক্ত হয়, মঙ্গা মুক্তই থাকবে। বাংলাদেশে কখনও যেন আর দুর্ভিক্ষ হতে না পারে। কৃষিজমি রক্ষার তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিজমি কোনও মতেই যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়; আমরা উৎপাদন করবো, উন্নয়ন করে যাবো। তবে সে উন্নয়নটা আমাদের কৃষি জমি সংরক্ষণ করেই করতে হবে।
সারাবিশ্বে প্রচুর খাদ্য অপচয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যের অপচয়টা কমাতে হবে, অপচয় যেন না হয়। সারা বিশ্বে কিন্তু একদিকে খাদ্যের অভাব অপর দিকে কিন্তু প্রচুর খাদ্যের অপচয় হয়। এই অপচয় যেন না হয়। বরং যে খাদ্যগুলো অতিরিক্ত থাকে সেটাকে আবার পুনর্ব্যবহার করা যায় কীভাবে; সেটার বিষয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। সে ধরনের ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। উদ্বৃত্ত যে খাদ্যটা থাকবে বা আপনি খেতে বসেও যে খাবারটা বেশি থাকবে সেটাও কীভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায়, অন্য চাহিদা পূরণ করা যায় কি না- সেটাকেও গবেষণার মধ্যে রাখা দরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ ও খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য চাহিদা ইনশাল্লাহ আমরা পূরণ করে যাবো। হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিনামূল্যে খাদ্য দিয়েও তাদের খাদ্য চাহিদা আমরা পূরণ করবো। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উৎপাদিত খাদ্যের মান ঠিক রাখার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য শুধু উৎপাদন না খাদ্যের মানটা যেন ঠিক থাকে।
খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমরা চাহিদার উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে তৃতীয়, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং ইলিশ মাছ উৎপাদনে প্রথম স্থান অর্জন করেছি। বীজ উৎপাদনে বিভিন্ন গবেষণা করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীজ আমরা উৎপাদন করবো, আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকবো না। সরকারিভাবে উৎপাদন করবে, বীজ মানসম্পন্ন বীজ সংগ্রহ এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষি বাতায়ন, কৃষক বন্ধু ফোন সেবা (৩৩৩১), কৃষকের জানালা, কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩) মাধ্যমে কৃষকদের সাথে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা, প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান, ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা, উন্নত বীজ ও সার সরবরাহ, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, কৃষি যান্তিকীকরণসহ কৃষি সম্প্রসারণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষিতে সফলতার জন্য বাংলাদেশী কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রশংসা করেন।