সীমান্ত অভিমুখে ইউক্রেনীয়দের ঢল
মানবিক করিডোর দিয়ে বেরুতে শুরু করেছে ইউক্রেনের বিভিন্ন অবরুদ্ধ শহরের বাসিন্দারা। বিশেষ করে রাজধানী কিয়েভের পশ্চিম দিকের শহর ইরপিন থেকে বিপুল সংখ্যক লোকজন বেরিয়ে যেতে শুরু করেছে। এর জেরে ইউক্রেন সীমান্তে যেন যুদ্ধাবস্থা থেকে পলায়নপর মানুষের ঢল নেমেছে।
বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে হেঁটে এবং গাড়িতে করে পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের মেডিকা বর্ডার ক্রসিংয়ে জড়ো হতে দেখা গেছে। সেখানে অপেক্ষারত যানবাহনের লাইন প্রায় ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে সীমান্তের ইউক্রেনীয় অংশ ২০ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার কথা জানিয়েছেন দুই নারী।
রাজধানী কিয়েভ, চেরনিহিভ, সুমি, খারকিভ এবং মারিউপোলের বেসামরিক বাসিন্দাদের সরে যেতে ‘মানবিক করিডোর’ ঘোষণা করেছে রাশিয়া। তবে বেসামরিক বাসিন্দাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদে সরে যেতে দেওয়ার এই উদ্যোগ যে সবক্ষেত্রে সহিংসতাবিহীন ছিল এমন নয়। অবরুদ্ধ মারিউপোল শহর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে রুশ সেনাদের গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মারিউপোল এবং জাপোরিঝিয়ার মধ্যেকার করিডোরের ওপর রুশ বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এমন সহিংসতা সত্ত্বেও মানবিক করিডোর দিয়ে সীমান্তে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। মূলত পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর উদ্দেশে ইউক্রেন ছেড়েছে এসব মানুষ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই ইউরোপে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। ইউক্রেন থেকে যারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু।
পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লাখ মানুষ। শুধু সোমবারই এক লাখ ৪১ হাজার ৫০০ মানুষ ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। দেশটিতে আগে থেকেই বহু ইউক্রেনিয়ান বসবাস করেন। এখন তাদের সঙ্গে বসবাসের জন্য আরও অনেকে সেখানে আসছে।
হাজার হাজার পোলিশ নাগরিক ইউক্রেনিয়ানদের তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। এই বাড়তি খরচ বহনের জন্য একটি বিল নিয়ে মঙ্গলবার আলোচনায় বসছে পোল্যান্ডের পার্লামেন্ট। এতে ইউক্রেনীয়দের পোল্যান্ডে ১৮ মাসের জন্য বসবাস, স্বাস্থ্যসেবা এবং সন্তানদের বিনামূল্যের শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।