(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩১ জুলাইয়ের ঘটনা।)
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ দিন যুগোস্লাভিয়া সফর শেষে ঢাকা ও বেলগ্রেড থেকে যুগপতভাবে প্রকাশিত এক যুক্ত ইস্তেহারে সার্বভৌম ক্ষমতার ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে উপমহাদেশে সকল অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানানো হয়। ইশতেহারে উল্লেখ করা হয় যে, যুগোস্লাভিয়া প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর উদ্ভূত সমস্যাগুলো সমাধানে বাংলাদেশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলো উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি জন্য সুনির্দিষ্ট ও গঠনমূলক পদক্ষেপ।
এতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান উপমহাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন এবং পাকিস্তানের জোর করে আটকে রাখা বাঙালিদের অবস্থার অবনতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন শান্তির প্রতীক বাংলাদেশের গভীর আগ্রহের কথা। উপমহাদেশের সকল অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান এবং উপমহাদেশে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তার উল্লেখ করা হয় এতে। উভয়ই পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত ব্যাপকভিত্তিক আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং যুগোস্লাভিয়া প্রধানমন্ত্রী বিয়েদিস আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উত্তেজনা হ্রাস এবং আলোচনা পদ্ধতিকে স্বাগত জানান। এ প্রসঙ্গে ইউরোপের যে বাস্তব ফল পাওয়া গেছে প্রধানমন্ত্রীদ্বয় তার উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধের অবসান ও ভিয়েতনাম-লাওস শান্তি স্থাপন এবং ভিয়েতনামে জনগণের স্বাধীন-সার্বভৌমভাবে নিজেদের সমস্যা সমাধানের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, উত্তেজনা হ্রাস এবং আলোচনার পদ্ধতি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও সম্প্রসারিত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিয়েদিস উল্লেখ করেন, উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও গুরুত্ব আরোপ করেন যে, উত্তেজনা হ্রাস ও আলোচনার প্রক্রিয়া জন্য উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রশ্নের সমাধানে সব রাষ্ট্রের পূর্ণ ও সমান অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি।
টিটো ঢাকায় আসবেন
যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট টিটো বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট টিটো ও ম্যাডাম টিটো কোনও এক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে সফরে আসবেন। যুগোস্লাভিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দিন রাষ্ট্রীয় সফর শেষে যুক্ত ইস্তেহারে এ কথা বলা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও তার নিজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ও ম্যাডাম টিটোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট টিটোও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে যুগোস্লাভিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ভারত ও পাকিস্তান সে বছর ১৮ আগস্ট নয়াদিল্লিতে তাদের আলোচনা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। দূত পর্যায়ে বৈঠকের সময় কতিপয় সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং এসব সমস্যা উভয় পক্ষেরই আরও বিবেচনা করে দেখার প্রয়োজন বলে তারা আলোচনা মুলতবি রাখতে রাজি হয়েছে। প্রকাশিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
১৯৭১ সালের বিরোধ থেকে উদ্ভূত মানবিক সমস্যাগুলোর ওপর সপ্তাহব্যাপী আলোচনা শেষে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনায় উভয় পক্ষেরই পারস্পরিক সমঝোতা পরিলক্ষিত হয়েছে। আগস্টে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত শেষ বৈঠকের পর সিমলা চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি উভয়পক্ষই পর্যালোচনা করবে। উভয়পক্ষ ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত মানবিক সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনা করে। পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, এ দিন সকালে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়ে উভয়পক্ষ ১৮ আগস্ট দিল্লিতে পাক-ভারত আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।