নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময় ঘনিয়ে আসায় তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এই মন্তব্য করেন । ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনপ্রণয়নের কথা উল্লেখ করা হলেও সেই আইনটি এখনও হয়নি। এই অবস্থায় জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ২০১২ সালে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সুপারিশের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন তিনি। একই পদ্ধতি বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদও চালু রেখেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে পাঁচ সদস্যের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে; তাদের পর যে কমিশন গঠিত হবে ২০২৩ সালের শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার থাকবে তাদের ওপরই।
নতুন ইসি গঠন নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি করবেন। তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। আইন না করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এক প্রতিক্রিয়ায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটা জনগণের সঙ্গে ‘ধোঁকাবাজি’।
বিএনপির সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন করেছে, করে যাবে, তাদের (বিএনপি) সেটা নিয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি নাম চান সকল দলের কাছে। তাদের দেওয়া প্রস্তাব থেকেও কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি যে কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে, সেখানে একজন আছেন। সেক্ষেত্রে আমি বলছি, তারা আমার কথায় আশ্বস্ত হবেন কি-না জানি না, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আইনমন্ত্রী বলেন,হয়ত বা সার্চ কমিটি গেজেটেড, এটা আইন নয়, যেহেতু সকলের কনসেনসাসের ভিত্তিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এটা করেছেন, এটা আইনের কাছাকাছি। কারণ, এটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। কোভিড সিচুয়েশন ইমপ্রুভ করলে আমরা পুরো সংসদে আমরা সাড়ে তিনশ সদস্য বসতে পারব, বসে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করতে পারব। সেই জিনিসটা কিন্তু আমাদের হচ্ছে না। সে কারণে আমি বলেছি, ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়। এই বার সার্চ কমিটি করবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশন প্রসঙ্গে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের উন্মোচন করতে তদন্ত কমিশন গঠনের কাজ ‘শুরু হয়ে গেছে’ বলে জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারে রাষ্ট্রপক্ষের এই প্রধান কৌঁসুলি বলেন, তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেয়। এই সময়ে কমিশন নিয়ে ব্যস্ত থেকে কোভিড মোকাবেলা না করলে ’সেটা বোধহয় বিবেচকের কাজ হতো না’। আমরা ইতোমধ্যে কাজ করা শুরু করেছি। এটার অবকাঠামো কী হবে, এটা কোন আইনের আওতায় থাকবে বা নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন হবে কি-না, এটা পরিধি কেমন হবে- এগুলোর খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। তদন্তের আওতার বিষয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এখন যেটা প্রয়োজন, যারা এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিলেন, তারা অনেক অপরাধের সাথে জড়িত। শুধু হত্যার অপরাধের সাথে তারা জড়িত না। তারা হচ্ছে এই ঘটনার পরে বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তন বা বিকৃত করার অপরাধ করেছেন। তারা এই অপরাধটার যাতে বিচার না হয়, সেই আইন করার অপরাধ তারা করেছে। এজন্য অবশ্যই নতুন প্রজন্ম এবং এখনকার প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস সঠিকভাবে জানানো প্রয়োজন।
আইনমন্ত্রী বলেন, যেটা প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া, এই কমিশন কিন্তু কোনো প্রতিহিংসামূলক নয়। এই কমিশন হচ্ছে যে, বিকৃত ইতিহাসকে ফেলে দিয়ে সত্য যে ইতিহাস সেটাকে সঠিক পথে চালিত করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেটা সম্পর্কে জ্ঞাত করা। এটার পরিধিগত ব্যাপার আছে, গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের নিয়ে এটা করা উচিৎ। সেসব কারণে এটার অবকাঠামোগত আলাপ-আলোচনা সেটার কাজ চলছে। বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যাতে ‘অপব্যবহার’ না হয়, সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক হয়রানির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে কোনো সাংবাদিককে যাতে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা না হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হয়রানি করতে চাইলে তার বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশের বিশেষ সেলের সুপারিশ নেওয়ার পদক্ষেপটি জোরদার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন।