জাতীয় দলে শাস্ত্রীর কোচিং অধ্যায়ের শুরু সহকারী কোচ হিসেবে। নানা সময়ে তিন দফায় এই দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের অগাস্টে ভারতের টিম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। বছর দুয়েক ছিলেন এই ভূমিকায়। পরে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে দুই বছরের চুক্তিতে ভারতের কোচের দায়িত্ব নেন তিনি।
২০১৯ বিশ্বকাপের সময় সাময়িকভাবে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় দেড় মাস। এরপর ওই বছরের অগাস্টে আবার দুই বছরের জন্য নতুন চুক্তি করেন এই বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কোচ হিসেবে তার যে সাফল্য ও অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে রসায়ন, তাতে দায়িত্বে থাকতে চাইলে তাকে সরানো কঠিন। তবে ইংল্যান্ডের গার্ডিয়ানের সঙ্গে আলাপচারিতায় শাস্ত্রী আভাস দিলেন, এবারই শেষ। আমার এরকমই মনে হয় (বিশ্বকাপ দিয়েই শেষ)… কারণ, যা কিছু চেয়েছি, সব কিছু অর্জন করেছি আমি। পাঁচ বছর এক নম্বরে থাকা (টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে), অস্ট্রেলিয়ায় দুইবারের সফরে জয়, ইংল্যান্ডে জয়! এই গ্রীষ্মের শুরুতে মাইক আথারটনের (সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার) সঙ্গে কথা হচ্ছিল আমার। তাকে বলছিলাম, আমার কাছে এটাই চূড়ান্ত-অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো এবং কোভিডের এই সময় ইংল্যান্ডে জয়।
গত জুনে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অবশ্য নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে যায় ভারত। এছাড়াও, ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালে হেরে যায় ওই নিউ জিল্যান্ডের কাছেই। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও নিজের সময়কে দারুণ সফল বলেই মনে করেন শাস্ত্রী। সাদা বলের ক্রিকেটে সব দলকেই তাদের আঙিনায় হারিয়েছি আমরা। এবার যদি বিশ্বকাপ (টি-টোয়েন্টি) জিততে পারি, তাহলে তা হবে সোনায় সোহাগা। এর চেয়ে বেশি কিছু নেই। আমি একটা কথা সবসময় বিশ্বকাপ করি, অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠার আগেই সরে যাওয়া উচিত। এবং আমি বলব যে, এই দলকে নিয়ে আমি যা করতে চেয়েছি, তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। অস্ট্রেলিয়াতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো এবং কোভিডের সময়ে ইংল্যান্ডে সিরিজে এগিয়ে থাকা… ক্রিকেটে আমার চার দশকের সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত।
শাস্ত্রী অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরে এমনিতেই আলোচনায় আছেন ইংল্যান্ড সফরে ভারতের শেষ টেস্ট স্থগিত হওয়ার ঘটনায়। সিরিজের চতুর্থ টেস্ট চলার সময় কোভিড পজিটিভ হন তিনি, বোলিং কোচ ভারত অরুন ও ফিল্ডিং কোচ রামাকৃষ্ণান শ্রীধর। পরে আরও কয়েকজন কোভিড পজিটিভ হলে পঞ্চম টেস্ট শুরুর আগ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায় ম্যাচটি।
ইংল্যান্ডে সংবাদমাধ্যম ও অনেকেরই তখন আঙুল ছিল শাস্ত্রীর দিকে। চতুর্থ টেস্ট শুরুর আগে লন্ডনে নিজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই আক্রান্ত হন ও দলের অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে শাস্ত্রী তা উড়িয়ে দিলেন। ওই আয়োজনে ২৫০ জন লোক ছিল এবং আর কেউ আক্রান্ত হননি। ওই অনুষ্ঠান থেকে এটা হয়নি। কারণ প্রকাশনা অনুষ্ঠান ছিল ৩১ অগাস্ট, আমি পজিটিভ হই ৩ সেপ্টেম্বর। তিন দিনেই কোভিড হয় না। আমার ধারণা, লিডসেই এটা হয়েছে (তৃতীয় টেস্টে)। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই, কারণ যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, সবাই ছিলেন দারুণ।
শাস্ত্রী জানান, কোভিডের ১০ দিনে সামান্য গলা ব্যথা ছাড়া তার সামান্যতম উপসর্গ দেখা দেয়নি। জ্বর ছিল না। কোনোধরনের ওষুধ, এমনকি ‘একটি প্যারাসিটামলও’ তাকে খেতে হয়নি।