শান্তিতে নোবেল জিতলেন ফিলিপাইনি বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মোরাতোভ। প্রতিবছরের মতো এ বছরও নোবেল পুরস্কারের এই ক্যাটাগরি নিয়েই সবার আগ্রহ ছিল। ১৯৩৫ সালে জার্মান সাংবাদিক কার্ল ফন ওজিয়েতস্কির পর এই প্রথম কোনো সাংবাদিককে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য বেছে নিল নরওয়ের নোবেল কমিটি।
নরওয়ের নোবেল ইন্সটিটিউট শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০২তম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করে । নোবেল পুরস্কারের এক কোটি সুইডিশ ক্রোনা সমান ভাগে ভাগ করে নেবেন রেসা আর মুরাতভ।
নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেন, গণতন্ত্র আর টেকসই শান্তির অন্যতম পূর্বশর্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইয়ে ‘সাহসী’ ভূমিকার জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে তাদের। বিশ্বে গণতন্ত্র আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যখন ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে; তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে যারা এই আদর্শের জন্য লড়াই করে চলেছেন, সেই সকল সাংবাদিকের প্রতিনিধিত্ব করছেন মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ। মুক্ত, স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা হল ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথা আর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ
নোবেল কমিটি বলেছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজেদের ভূমিকার কারণে মারিয়া রেসা এবং দিমিত্রি মোরাতোভকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। নোবেল কমিটি মনে করে, গণতন্ত্র এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পূর্ব শর্তই হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা।
মারিয়া রেসা ফিলিপাইনভিত্তিক অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইট র্যাপলার-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এর আগে তিনি মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দুই দশক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেছেন। আর দিমিত্রি মোরাতোভ রুশ সংবাদপত্র নোভায়া গেজেতার এডিটর ইন চিফ। এই সংবাদপত্রটিকে অনেকেই রাশিয়ার একমাত্র সত্যিকার সমালোচক সংবাদমাধ্যম মনে করে থাকে।
২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার লড়াইয়ে অনন্য ভূমিকার জন্য সংস্থাটিকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। ২০১৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জেতেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কার জেতেন তিনি। এর আগে নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসা ও বারাক ওবামার মতো ব্যক্তিত্বরা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রসঙ্গত, ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল নিজের মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান।
১৯৬৮ সালে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি। সে বছর পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধান করা এবং নোবেল পুরস্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব সুইডিশ অ্যাকাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়।