রূপা হক লেবার পার্টির সংসদীয় দল থেকে বরখাস্ত
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংকে নিয়ে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্যের অভিযোগে লেবার পার্টির সংসদীয় দল থেকে বাদ পড়লেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রূপা হক।
বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার লিভারপুলে লেবার পার্টির এক অনুষ্ঠানে কোয়াসি কোয়ার্টেংকে ‘লোক দেখানো কৃষ্ণাঙ্গ’ বলে মন্তব্য করেন রূপা হক। সেই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিল লেবার পার্টি। লেবার পার্টির সংসদীয় দল থেকে বরখাস্ত হওয়ায় রূপা হককে আপাতত পার্লামেন্টে বসতে হবে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখারও ঘোষণা দিয়েছে পার্লামেন্টের বিরোধী দল লেবার পার্টি।
ক্ষমতাসীন টোরি দলের চেয়ার জেইক ব্যারি লেবার এমপি রূপার ওই মন্তব্যকে ‘বর্ণবাদী ও জঘন্য’ আখ্যা দিয়েছেন। লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলা রেনার ওই মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছেন। ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনের এমপি রূপা হক বলেছেন, ওই মন্তব্যের জন্য অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। লিভারপুলে লেবার পার্টির কনফারেন্সে দলের নেতা কিয়ার স্টারমারের বক্তব্য শুরুর কিছু সময় আগে রূপা হকের ওই মন্তব্যের অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে গুইডো ফকস ওয়েবসাইট।
সোমবার ওই অনুষ্ঠানের প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংকে ইংগিত করে রূপা হক বলেছিলেন, “তিনি লোক দেখানো; তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ, কিন্তু আবার অন্যদের মত… তিনি ইটনে পড়ালেখা করেছেন, অনেক ব্যয়বহুল স্কুলে পড়েছেন; বরাবর তিনি দেশের সেরা স্কুলগুলোতে ছিলেন। আপনি যদি (বিবিসির) টুডে প্রোগ্রামে তার কথা শোনেন, আপনি বুঝতেই পারবেন না যে তিনি কালো।
তার ওই মন্তব্যের অডিও প্রকাশ হলে ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। টোরিরা দাবি তোলেন, ওই মন্তব্যের জন্য লেবার এমপিকে ক্ষমা চাইতে হবে। এমনকি রূপা হকের নিজের দলের নেতারাও তার মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেন।
লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলা রেনার বিবিসিকে বলেন, মিসেস হকের ক্ষমা চাওয়া উচিত।” আর পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র ডেভিড লামি বলেন, “ওই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। আমি নিজে এসব বলতাম না।
এরপর লেবার পার্টির সংসদীয় দল থেকে রূপা হককে বরখাস্তের খবর আসে। পরে রূপ হক এক টুইটে বলেন, তিনি কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং আগের দিনের মন্তব্যের জন্য ‘আন্তরিকভাবে’ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমার মন্তব্য সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল না। ওই মন্তব্যে যারাই আঘাত পেয়েছেন, আমি হৃদয় থেকে তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।
এ মাসের শুরুতে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া কোয়াসি কোয়ার্টেং জন্মগ্রহণ করেছেন পূর্ব লন্ডনে, তার পূর্বপুরুষের বসবাস ছিল আফ্রিকার দেশ ঘানায়। আর ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপা হকের বাবা-মা যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের পাবনা থেকে। তিনি একাধারে লেখক, মিউজিক ডিজে, কলামনিস্ট হিসাবে পরিচিত।
রূপা হক কেমব্রিজে পড়েছেন রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন। আর কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে এতোদিন পড়িয়েছেন সমাজ বিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের মতো বিষয়। আর তার ছোট বোন কনি হক বিবিসির ব্লু পিটার শো উপস্থাপনার কল্যাণে ব্রিটিশদের কাছে খুবই পরিচিত মুখ।