সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

মুনিয়া হত্যা মামলা: এজাহারে যা আছে

আদালত প্রতিবেদক / ৩৪৪ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রাজধানীর গুলশানে একটি ফ্ল্যাটে কলেজ শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী আফরোজা সোবহান, ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক মাফরোজা পারভীনের আদালতে মামলার আবেদন করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি রেজাউল করিম জানান, আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটির বিষয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।আদালতে মুনিয়ার বোনের আবেদনে উল্লেখ করা অভিযোগের ভাষা হুবহু রাখা হয়েছে।

আহমেদ আকবর সোবহানসহ এবার আসামি ৮ জন

মামলায় আসামি করা হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, আনভীরের মা আফরোজা, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা, আনভীরের বাবা আহমেদ আকবর সোবহান, শারমিন, সাফিয়া রহমান মিম, মডেল পিয়াসা ও ইব্রাহীম আহমেদ রিপনকে। পিয়াসা বর্তমানে পুলিশের করা অপর এক মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে:

অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন মুনিয়া

বড় বোন নুসরাত মামলায় অভিযোগ করেছেন, মুনিয়ার মৃত্যুর পর যে ময়না তদন্ত করা হয়েছে; সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভিকটিম ২/৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।’

মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়, ‘মুনিয়া প্রতিদিন ডায়েরি লিখতেন। বাসায় তার লেখা চারটি ডায়েরি পাওয়া গেছে। যাতে আসামি আনভীরের সঙ্গে মেলামেশা ও শারীরিক সম্পর্কের কথা তারিখ দিয়ে লেখা রয়েছে। একটি ডায়েরির কাভারে লেখা ছিল ….. ‘Anvir I love you’.

এজাহারে দাবি করা হয়, ‘‘ভিকটিম ২/৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ভিকটিম ১ নম্বর আসামিকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এতে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি অপর আসামিদের মধ্যে প্রকাশ পেলে তারা পারিবারিক সুনাম-সুখ্যাতি রক্ষায় ভিকটিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে ১ নম্বর আসামি ভিকটিমকে বলে, ‘তুমি কুমিল্লা চলে যাও। মা তোমাকে মেরে ফেলবে।’ এসময় ভিকটিম মুনিয়া ‘লাইভে’ এসে সব ঘটনা ফাঁস করে দেবে বলে ১ নম্বর আসামিকে হুমকি দেয়। পাল্টা জবাবে আসামি ভিকটিমকে বলে, ‘এত সময় আর তুই পাবি না’।’’

ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে মুনিয়াকে

অভিযোগের ১৪তম অংশে বলা হয়, ‘‘অত্র মামলার আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ঘটনার তারিখ ভিকটিমকে বাসা থেকে পালানোর সুযোগ না দিয়ে বাসায় আটকে রেখে কিলিং মিশনের মাধ্যমে ভিকটিমকে ধর্ষণোত্তর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে সুকৌশলে ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য ভিকটিমের লাশ ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।’’

১৬তম অংশে লেখা ‘তদন্ত রিপোর্টে ভিকটিমের সঙ্গে মৃত্যুর পূর্বে Intercourse এর প্রমাণ মিলেছে, অর্থাৎ ভিকটিম মৃত্যুর পূর্বে ধর্ষিত।’

পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ

১৭তম অংশে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে বলা হয়, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমের হাতের লেখা ডায়েরি, মোবাইলসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করলেও রুমে পাওয়া রক্তমাখা জামা জব্দ করেনি। পরবর্তী ১৮তম অংশে বলা হয়, বাদী থানায় মামলা করতে গেলে কর্তৃপক্ষ বাদীর অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) (২)/৩০ ধারা এবং ৩০২/৩৪ ধারা উপাদান থাকা সত্ত্বেও উক্ত ধারায় মামলা রেকর্ড করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে।

মুনিয়া ঢাকা থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন

মুনিয়া ঢাকা থেকে পালাতে চেয়েছিলেন দাবি করে অভিযোগের চতুর্থ অংশে লেখা হয়, ‘ভিকটিম ঘটনা আঁচ করতে পেরে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢাকা ছেড়ে যশোর পালিয়ে যেতে চায় এবং এজন্য শেষ ঘটনার তারিখ ভোর ৫টায় এবং সকাল ৭টায় ৫/৮ নম্বর আসামি বাড়িওয়ালার নিকট গাড়ি চায়। ৫/৮ নম্বর আসামি গাড়ি না দিয়ে উল্টো বিষয়টি অপর আসামিদের নিকট ফাঁস করে দেয়। তখনই সকল আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিমকে বাসায় আটকে রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে এবং কিলিং মিশন দিয়ে ভিকটিমকে ধর্ষণোত্তর হত্যা করে আসামিরা তাদের Common intention পূরণ করে।

বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছিল মুনিয়া

২৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার বড় বোন ও মামলার বাদী নুসরাতকে ফোন দিয়েছিল। মুনিয়া ফোনে নুসরাতকে বলে, ‘আপু আমার বিপদ, আনভীর আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। সে আমাকে বিয়ে করবে না। ভোগ করেছে মাত্র। তুমি তাড়াতাড়ি আসো, আমার বড় দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে।’ আরও বলে, ‘আসার সময় ইফতারের জন্য কলা নিয়ে এসো।’

বাড়িওয়ালা শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অভিযোগের ষষ্ঠ অংশের বিবরণে বলা হয়, ‘ভিকটিমের হত্যার তারিখ ২৬/৪/২০২১ইং দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে ৫ নম্বর আসামি শারমিন বাদীকে ফোন করে বলে ‘তোমার বোনের কিছু হলে আমরা জানি না, তখন পুলিশ আসবে; মিডিয়া আসবে ইত্যাদি।’ অথচ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট মতে, ভিকটিমের মৃত্যু হয় দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে। এ ঘটনা প্রমাণ করে বাড়িওয়ালা (৫ নম্বর আসামি) মৃত্যু সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত ছিল এবং এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।

বাদী ঘটনার তারিখ বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে কুমিল্লা থেকে ভিকটিমের দরজা বন্ধ দেখে অনেক পীড়াপিড়ির পরও ভেতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে ৫/৮ নম্বর আসামি বাড়িওয়ালার কাছে থাকা বাসার সংরক্ষিত চাবি চাইলে তারা ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চাবি না দিয়ে তালা ভেঙে বাসায় ঢোকার পরামর্শ দেয়।’

মুনিয়ার পরনের জামাকাপড় ছেঁড়া ছিল

অভিযোগের নবম অংশে বলা হয়, ‘পুলিশ ভিকটিমের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। এতে ভিকটিমের যৌনাঙ্গে জখম ও রক্ত পরিলক্ষিত হয়। ভিকটিমের পরিধেয় বস্ত্র, অন্তর্বাস, পাজামা, কাটা ছেঁড়া ছিল। যাতে প্রতীয়মান হয়, হত্যার পূর্বে ভিকটিমের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল এবং ভিকটিম ধর্ষিতা হয়েছিল।’

উল্লেখ্য, মুনিয়া মিরপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা মৃত শফিকুর রহমান। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের দক্ষিণ পাড়া উজির দিঘি এলাকায়।

এর আগে মুনিয়ার ‘আত্মহত্যা’য় প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলা থেকে সায়েম সোবহান আনভীরকে প্রথমে অব্যাহতি দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দেয় গুলশান থানা পুলিশ। পরে আদালত সেই রিপোর্ট গ্রহণ করে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর