এক সিরিজ শেষে চারে বাংলাদেশ, আরেক সিরিজ শেষে সাতে
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম দিন—মাস ঘুরতেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুই-ই দেখে ফেলল বাংলাদেশ দল। গত মাসের শুরুতে পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ। সেই দলটা এ মাসের প্রথম দিন ভারত সফরে টেস্ট সিরিজে হলো ধবলধোলাই।
কানপুর টেস্টের শেষ দিনে আজ রোহিত-কোহলি-বুমরাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের পর আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৫ চক্রের পয়েন্ট তালিকার সাতে নেমে গেছে নাজমুল হোসেনের দল।
বাংলাদেশের পরের টেস্ট সিরিজ এ মাসেই, দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। কানপুরে আজ ভারতের কাছে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট তালিকার পাঁচে উঠে এসেছে প্রোটিয়ার। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে থেকে আগামী ১৬ অক্টোবর ঢাকায় পা রাখবে টেম্বা বাভুমার দল।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের হিসাব পয়েন্ট দিয়ে নয়; পয়েন্টের শতকরা হার দিয়ে নির্ধারিত হয়। সাতে নেমে যাওয়া বাংলাদেশের শতকরা পয়েন্ট এখন ৩৪.৩৮, পাঁচে উঠে আসা দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৮.৮৯। ২০২৩-২৫ চক্রে মোট ১২ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ৮টি এরই মধ্যে খেলে ফেলেছে। জিতেছে ৩টি, হেরেছে ৫টি। বাকি ৪ ম্যাচের দুটি অক্টোবর-নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, শেষ দুটি নভেম্বর-ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে একটি ম্যাচ জিতলে ১২ পয়েন্ট পাওয়া যায়। সেই হিসেবে ৩ জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট হওয়ার কথা ৩৬। কিন্তু গত আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটে জয়ের আনন্দের রেশ থাকতেই দুঃসংবাদ পায় নাজমুলের দল। ওই টেস্টে মন্থর ওভার রেটের কারণে বাংলাদেশের ৩ পয়েন্ট কেটে নেয় আইসিসি। তাই দলটির বর্তমান পয়েন্ট ৩৩।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সব কটি (মোট ৪টি) ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হতে পারে ৮১। সে ক্ষেত্রে পয়েন্টের শতকরা হার হবে ৫৬.২৫। শীর্ষে থাকা ভারতের এখন পয়েন্ট ৭৪.২৪ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ৬২.৫০ শতাংশ।
আজ বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করার পর পয়েন্ট তালিকার চূড়ায় থাকা ভারত শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে। এই মুহূর্তে ভারতের পয়েন্টের হার ৭৪.২৪। টানা তৃতীয় চক্রে ফাইনাল খেলার পথে অনেকটা এগিয়েও গেছে ভারত। রোহিত শর্মার দলের পরের সিরিজও ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কাছে ধবলধোলাই হওয়া কিউইদের বিপক্ষে ভারতই যে ফেবারিট, সেটা না বললেও চলছে। তাই ভারত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে নাকি দ্বিতীয় হয়ে লর্ডসের ফাইনালে খেলবে, আলোচনা হতে পারে শুধু এটা নিয়ে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্টের হার ৬২.৫০। অস্ট্রেলিয়ানদের সামনেও অপেক্ষা করছে কঠিন দুই পরীক্ষা। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নিজেদের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি এবং এরপর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কায় ২ ম্যাচের ওয়ার্ন-মুরালিধরন ট্রফি। নিউজিল্যান্ডকে সম্প্রতি ধবলধোলাই করা লঙ্কানরা অস্ট্রেলিয়ানদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। তিনে থাকা ম্যাথুস-মেন্ডিসদের বর্তমান পয়েন্টের হার ৫৫.৫৬।
৬ বছর পর ইনিংস হার নিউজিল্যান্ডের
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের আগে শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবে। সেখানে খেলবে ২ টেস্টের সিরিজ। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারত যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় আর শ্রীলঙ্কা যদি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সিরিজ ড্র এবং নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতে নেয়, তাহলে আগামী বছর জুনে লর্ডসে হবে ‘অল-এশিয়ান ফাইনাল’—ভারত-শ্রীলঙ্কা।
ভারতের কাছে ধবলধোলাই হওয়ার পর বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা শেষ হলেও এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রের পারফরম্যান্স আগের দুবারের তুলনায় ভালো।
আইসিসি টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া কীভাবে এত শিরোপা জেতে?
২০১৯-২১ প্রথম চক্রে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০২১-২৩ দ্বিতীয় চক্রে জিতেছিল একটি—ঐতিহাসিক মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট। এবার ৪ ম্যাচ বাকি থাকতেই জিতেছে ৩ ম্যাচ। পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করার আগে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে সিলেট টেস্ট। বাংলাদেশের এবারের প্রাপ্তি একেবারেই কম নয়।