বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৪১ অপরাহ্ন

বিশ্বমন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বিলাসিতা না করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ৫৯ বার
আপডেট : সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করা নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম। তখনও অনেকে মুচকি হেসেছিল। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে একটা দৃষ্টান্ত। আজ গ্রামে বসে ছেলে-মেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং করে ডলার আয় করে। এই সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বমন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দেশবাসীকে বিলাসিতা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মিরপুর সেনানিবাসে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ডিফেন্স কোর্স ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনিতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার কাছে আমার একটি অনুরোধ থাকবে আমাদের কোনো রকম বিলাসিতা চলবে না। কারণ, অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কাটা আমাদের দেশেও পড়বে, পড়তে যাচ্ছে, তা মাথায় রাখতে হবে। বিশ্বটা হলো এখন গ্লোবাল ভিলেজ, একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। তা মাথায় রেখে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাব। তিনি বলেন, আমাদের দেশ, আমাদের সম্পদ, আমাদেরই রক্ষা করে চলতে হবে। নিজে উৎপাদন করব, নিজের দেশ নিজে গড়ে তুলব- এই কথাটি যদি মাথায় রাখতে পারি, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে পারি, ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি থেকে দেশকে মুক্ত রেখে আত্ম সামাজিকভাবে উন্নতি করাই আমাদের লক্ষ্য। আমার ও আমার পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণিত হয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করব। তখন অনেকে বলেছে এটা কখনও সম্ভব না। অনেক দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে যখন আলোচনা করেছি তারা বলেছে, এটা সম্ভব না। অসম্ভবকে সম্ভব করা এটাই বাঙালির চরিত্র। এটা আমরা করতে পারব, আমরা করেছি। তিনি বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটা প্রতিরক্ষা নীতিমালা দিয়ে গেছেন, সেখানে বলা আছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। বাংলাদেশই একটি দেশ পৃথিবীতে, যে দেশ প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে এবং আমরা তা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি, কারণ যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০ সালে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে অনুসারে সরকার কাজ করে চলেছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর আকার বৃদ্ধি, আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ প্রদান যা বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা জাতীয় প্রতিরক্ষা আইন ২০১৮ উন্নয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নানা কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা একটি দল করে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন আমরা রিজার্ভ পেয়েছিলাম মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। আমরা সেই পাঁচ বিলিয়ন ডলারকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হই। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কিনে বিনামূল্যে মানুষকে দিয়েছি। আমরা রিজার্ভের টাকা খরচ করে এই ভ্যাকসিন কিনেছি। আজ যে গম আমরা দুইশ ডলারে কিনতে পারতাম, সেই গম পাঁচশ, ছয়শ ডলারেও কিনতে হচ্ছে। যে পরিবহন খরচ আটশ ডলার ছিল, তা এখন আমাদের ৩৮শ ডলারে আনতে হচ্ছে। কোনো কার্পণ্য করিনি। আমাদের ডলার খরচ করতে হয়েছে, রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে, করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আমদানি-রফতানি বেড়েছে। বিনিয়োগ হচ্ছে, ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সার থেকে শুরু করে সব উপকরণ আমরা কৃষকের কাছে স্বল্প মূল্যে পৌঁছে দিচ্ছি। আমার আহ্বান, যেখানে যার যতটুক জমি আছে, উৎপাদন করুন। কারণ, বিশ্বজুড়ে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, তা যেন আমাদের না হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, একটি টাকাও রিজার্ভ ছিল না। সেই ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছিলেন। প্রতিটি বাহিনীকে তিনি গড়ে তোলেন। প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করে দিয়ে যান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পায়। আমরা আধুনিক সুসজ্জিত সশন্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিই এবং আমর্ড ফোর্সেস গোল্ড ২০২০ প্রণয়ন করি। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি নীতিমালা দিয়ে গেছেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা দাবি করতে পারি, প্রতিটি দেশের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, আমরা ধরে রাখতে পেরেছি এবং সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগে উন্নীত করেছিলেন। এরপর কিন্তু প্রবৃদ্ধি আর এত বৃদ্ধি পায়নি। আওয়ামী লীগ পর পর তিন বার আসার পর আমরা প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ পর্যন্ত উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, কোভিড ১৯ বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। তারপর আবার মরার উপর খাড়া ঘা এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের পর আবার স্যাংকশন ফর দ্য স্যাংকশন। এতে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তাদের রিজার্ভ কমেছে। সেই অর্থে বলতে পারি, বাংলাদেশকে এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যেমন উন্নয়ন কাজে সশস্ত্র বাহিনী ভূমিকা রাখছে, তেমনি বিদেশেও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রশংসা পাচ্ছে।  আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সব সময় এটি মনে রাখতে হবে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই বাহিনী আমরা গড়ে তুলেছি। দেশের মান মর্যাদা সব সময় সমুন্নত রাখা এবং দেশের মানুষের পাশে থাকা, তাদের সহযোগিতা করা আমাদের সবচেয়ে বড় রক্ষ্য। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উঠতে হবে। আবারও আমি বলব, সাশ্রয়ী হতে হবে, নিজেদের সঞ্চয় রাখতে হবে, নিজেদের উৎপাদন নিজেদের করতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর