মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এই কথা জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বস্তিবাসীদের মানবেতর জীবনের কথা তুলে ধরে তাদের আবাসন সমস্যা দূর করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে অন্তত ৩শটা ফ্ল্যাট থেকে তিনটা পরিবারকে আমরা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে যাচ্ছি এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে আমরা এই ব্যবস্থাটা নেব। কিন্তু তাদের ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। যতদিন এই ঢাকায় থাকবে তারা ভাড়া দিয়ে থাকবে।
“আর যারা নিজের গ্রামে ফিরতে চান, যদি কারও জমি না থাকে জমিসহ আমরা ঘর দেব। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে আমরা সেটা দিচ্ছি। সেই সাথে ঋণ পাবেন এবং সেখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন, প্রয়োজনে ছয় মাসের খাবার আমরা বিনামূল্যে দেব, যাতে ওই ছয় মাসের মধ্যে নিজে একটা কাজ করে চলতে পারেন।”
তিনি বলেন, “যাদের ভিটামাটি আছে তাদেরও ঘর করে দেওয়া হবে, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। সেই ঘরে ফেরা কর্মসূচিটা আবার আমি ভালোভাবে চালু করব। বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থেকে নিজের গ্রামে ফিরে গেলে এই সুবিধাগুলো পাবেন।”
বস্তির অস্বাভাবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা তুলে ধরে বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট করার উদ্দেশ্যও জানান প্রধানমন্ত্রী।
“নানাভাবেই এখানে (বস্তি) একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ থাকে। সেই জায়গা থেকে মানুষগুলোকে মুক্ত করা, একটা সুন্দর পরিবেশে বসবাস করা, নিজের জীবন জীবিকা চালানো। (ফ্ল্যাটে) মাসে ভাড়া দিতে পারবেন, সপ্তাহে যারা কামাই করে ভাড়া দেয় তারাও পারবে বা প্রতিদিনের ভাড়া হিসেবে যদি কেউ নিতে চায় সেভাবেও নিতে পারবে। সেভাবে আমরা এই ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করে দিচ্ছি যাতে একটা সুস্থ পরিবেশে সবাই থাকবে।”
প্রথমবার সরকার গঠনের পর বস্তির শিশুদের গণভবনে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পরবর্তীতে বস্তিবাসী যারা নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে চান তাদের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, “কটা কর্মসূচি আমরা নিয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি। একজন বস্তিবাসী যদি নিজ গ্রামে ফিরে যায় তার যদি ভিটেমাটি থাকে সেখানে বিনা পয়সায় ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া, তাকে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার পাশপাশি ছয় মাসের খাবার বিনা পয়সায় দেওয়া এবং সে যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এভাবে বেশ কয়েক হাজার মানুষ প্রায় ১৮ হাজার পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। সেভাবে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলাম।”
বিভিন্ন সময় বস্তি পরিদর্শন করে বস্তিবাসীদের মানবেতর জীবন দেখার অভিজ্ঞতার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
একই সময়ে সরকার প্রধান মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ২৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত পাঁচটি আবাসন প্রকল্প এবং মাদারীপুরে নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে এই সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।