সাধারণ মানুষকে এখন আর টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়াতে হবে না। পণ্য নিয়ে টিসিবির ডিলাররাই সাধারণ মানুষের বাড়ির কাছাকাছি থাকবেন। ক্রেতা যখন চাইবেন তখনই ডিলারের দোকান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। তবে যে কেউ চাইলে টিসিবির পণ্য কিনতে পারবেন না। এর জন্য লাগবে সরকারের দেওয়া বিশেষ কার্ড। বদলে দেওয়া হয়েছে ডিও বরাদ্দের সিস্টেমও।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকার টিসিবির ট্রাকসেল বন্ধ করেছে। আগে টিসিবির জেলা আঞ্চলিক কার্যালয় কর্মকর্তারা বরাদ্দপত্র বা ডিও ইস্যু করতে পারলেও এখন জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাদ্দপত্র ইস্যু করবেন।
আগে পণ্য কেনার জন্য ক্রেতাদের তালিকা ছিল না। এখন সারা দেশের জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সহায়তায় নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে এক কোটি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের দেওয়া হবে ফ্যামিলি কার্ড।
সূত্র আরও জানায়, একসময় গোডাউন থেকে পণ্য ট্রাকে তুলে বিক্রি করলেই ডিলারদের কাজ শেষ হতো। এখন প্রত্যেক ডিলারকে নিজস্ব দোকান নিতে হবে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৬৮/১৯৭২-এর মাধ্যমে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। আশির দশকে মুক্তবাজার অর্থনীতি বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সীমিত হয়ে আসে। পরে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকারি উদ্যোগের অপরিহার্যতা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার টিসিবিকে গতিশীল ও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়। মূলত নির্দিষ্ট কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলে ভোক্তার কাছে সরবরাহ করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতেই গঠিত হয় টিসিবি।
সূত্র জানায়, টিসিবি যে কয়েকটি কার্যাবলি পরিচালনা করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—সরকারের নীতিমালা অনুসারে মালামাল, আমদানি ও রফতানির ব্যবসা পরিচালনা করা। সময়ে সময়ে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যের বাফার স্টক গড়ে তোলা ও তা মজুত রাখা। এছাড়া, আমদানিকৃত মালামাল, পণ্যদ্রব্য, উপাদান বিক্রয় এবং বিতরণের ব্যবস্থা করা এবং এই ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনার অধীনে ডিলার/এজেন্ট নিয়োগ করাও টিসিবির কাজ। সরকার মনে করে, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির গুরুত্ব অনেক। তাই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই টিসিবিকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, সরকার সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষদের সাশ্রয়ী মূল্যে কয়েকটি নিত্যপণ্য সরবরাহ করে। এখানে সরকারকে অনেক অর্থই সাবসিডি (ভর্তুকি) দিতে হয়। বর্তমান গণতান্ত্রিক শেখ হাসিনার সরকার সাধারণ মানুষের প্রতি দরদি বলেই টিসিবির কার্যক্রমে ব্যাপকতা এনেছে। সে কারণে এক কোটি পরিবারের জন্য দেওয়া কার্ডে ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান জানিয়েছেন, একটা সময় ছিল সাধারণ মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হতো। এখন তা লাগবে না। কার্ডধারীরা সুযোগ মতো নির্দিষ্ট ডিলারের দোকান থেকে সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে পারছেন।
উল্লেখ্য, টিসিবি ১১০ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজিতে চিনি, ৬৫ টাকা কেজিতে মসুর ডাল, ৫০ টাকায় ছোলা এবং ২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে।