পার্বত্য ইস্যু একটি রাজনৈতিক ও জাতীয় সমস্যা: সন্তু লারমা
জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেছেন, অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু আজ ২৪ বছর পর চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থা অনেক হতাশাব্যঞ্জক। গত ২৪ বছরে যে সরকারের আমলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সে সরকারই অধিকাংশ সময় ক্ষমতায় আছে আজ অবধি। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া একেবারেই থেমে আছে। পার্বত্য সমস্যা একটি রাজনৈতিক ও জাতীয় সমস্যা। যেহেতু এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা, সেহেতু এটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। তার জন্যই চুক্তি করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই যুগপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের যৌথ আয়োজনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় আয়োজনের শুরুতে সংহতি বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথিন প্রমিলা, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম প্রমুখ।
সভায় রাশেদ খান মেনন বলেন, ২৪ বছর পর চুক্তি নিয়ে যে আনন্দ উচ্ছ্বাস থাকার কথা ছিল, তা আজ নেই বলে আমার মনে হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সবার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ছিল। এটার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেসকো শান্তি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। কিন্তু আজ হয়তো রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জায়গায় অন্য কৌশল নেওয়া হয়েছে।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তা সমাধান হতে পারেনি। আজকে পার্বত্য অঞ্চলে জুম্ম জনগণকে যেভাবে শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়ন করা হচ্ছে, তা বলার ভাষা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ বড় ধরনের কারাগারে পরিণত হয়েছে। সমিতির অনেক নেতাকর্মীকে আজ মামলা দিয়ে, গ্রেফতার করে, হামলা চালিয়ে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। দমন-পীড়নের এসব খবর আজ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চুক্তির দুই যুগপূর্তি আজ বিষাদ, বেদনার ভারে পালন করতে হচ্ছে। উপনিবেশ হিসেবেই পাহাড়কে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়কে উপনিবেশ নয়, সরকারি ভাষায় ‘উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২৪ বছরেও তা হয়ে উঠতে পারলো না। বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য আদিবাসীদের স্বীকৃতি না দিয়ে অনাগরিক হিসেবে রাখার মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালকদের লজ্জা থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। সুলতানা কামাল বলেন, আমরা শান্তি চেয়েছিলাম বলেই চুক্তি করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা বাস্তবতা বলে দেয়। অন্তত শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে—তা ন্যূনতমও বলতে পারি না। উল্টো একতরফা সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল বলে আমরা দেখেছি। আদিবাসী মানুষের আদি জীবিকার ওপরও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাদের সমাজ, সংস্কৃতি, পেশা, অর্থনীতি সবকিছুর ওপরে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।