দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে রফতানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রফতানি ওপর ভর করে চাঙা অর্থনীতির দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বাংলাদেশ। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক নিবন্ধে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
নিবন্ধে বলা হয়, গত এক দশকে ডলারের হিসাবে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতের রফতানির মাধ্যমে এই সাফল্য এসেছে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও জোরদার হবে।
বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান সেই হিসেবে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে তৈরি পোশাক রফতানির বড় ধরনের ভূমিকা ছিল।
২০২০ সালে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। অথচ ২০১১ সালেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। মূলত করোনা মহামারিতে ভারতের অর্থনৈতিক মন্দার ফলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।
আসিয়ান, রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) কিংবা কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ ট্রান্স-প্যাসেফিক পার্টনারশিপের (সিপিটিপিপি) সঙ্গে বাংলাদেশকে বহুপাক্ষিক ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলারও পরামর্শ দিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পূর্বমুখী সহযোগিতার সম্পর্ক আরও ফলপ্রসূ হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাফল্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে নিকটবর্তী দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের মডেলের মিল রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে উচ্চমূল্যের রফতানি পণ্য উৎপাদন ও রফতানি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মিলবে। সংস্থাটির কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির চেয়ার টেফারি টেসফাসো ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে সিডিপির পাঁচ দিন ব্যাপী ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা শেষে এই ঘোষণা আসে।
জাতিসংঘের রীতি অনুযায়ী, কোনও দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো মানদণ্ড অর্জনে সমর্থ হওয়ায় তারা এই সুপারিশের আওতাভূক্ত হয়েছে।
১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, যেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনও দেশের পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২ এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২এ নেমেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে লাওস ও নেপালও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ পেয়েছে। নেপাল ২০১৮ সালেই দ্বিতীয়বারের মতো উত্তরণের মানদণ্ড অর্জন করে। তবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তাদের সময় লেগে যায়। লাওস ও মিয়ানমারও দ্বিতীয় দফায় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের মানদণ্ড অর্জন করেছে। তবে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও জরুরি অবস্থা জারির কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় তাদের এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়নি।