মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

তিন দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৯৯ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২

প্রথম ইনিংসেই আসলে ম্যাচের ফলাফল একরকম লেখা হয়ে গিয়েছিল। তবে ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পায় কিনা, সেটাই ছিল দেখার। টপ অর্ডারের লড়াই ও লিটন দাসের চমৎকার ব্যাটিংয়ে কিছুটা আশা জাগলেও শেষরক্ষা হয়নি। ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট ইনিংস ব্যবধানেই হেরেছে মুমিনুল হকরা। মাত্র তিন দিনে শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।

কিউই পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে আরেকবার কুপোকাত বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসের তুলনায় ব্যাটিংয়ে উন্নতি হলেও লাভ হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৮ রানে অলআউট হয়েছে সফরকারীরা। ফলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট ইনিংস ও ১১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ জেতায় দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।

ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন রস টেলর। বাংলাদেশের ইনিংসের শেষটা হলো তার হাতেই। মূলত ব্যাটার হলেও তার ক্যারিয়ার শেষ হলো উইকেট উদযাপন দিয়ে। শেষ ব্যাটার হিসেবে এবাদত হোসেনকে আউট করে টেস্ট আঙিনায় পথচলা থামালেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সমান্তরালে তাকে জয় দিয়ে বিদায় জানালো টম ল্যাথামরা।

বাংলাদেশের টপ অর্ডার দ্বিতীয় ইনিংসে চেষ্টা করেছে। যদিও ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। লিটন দাস তাদের দেখিয়েছেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় কীভাবে ব্যাট করতে হয়। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এই উইকেটকিপার ব্যাটার তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। যদিও শতক পূরণ করার পরপরই আউট হয়ে যান তিনি। তার বিদায়ের পর হারটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় প্রথম ইনিংসে মাত্র ১২৬ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের ৬ উইকেটে ৫২১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে উন্নতি হলেও ইনিংস হার বাঁচাতে পারেনি সফরকারীরা।

প্রথম ইনিংসে কিউই পেসারদের দাপটে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ইনিংসেও দাপট দেখিয়েছেন স্বাগতিকরা পেসাররা। তারপরও তাদের ওপর চড়াও হয়ে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেছেন লিটন। কাইল জেমিসনের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ১১৪ বলে খেলেন ১০২ রানের ইনিংস, যাতে ছিল ১৪ চার ও এক ছক্কার মার। দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর ৩৭ রান এসেছে অধিনায়ক মুমিনুলের ব্যাট থেকে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ফলোঅনে নামা বাংলাদেশের প্রথম সেশনে ছিল ভালো ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রতিরোধ গড়ে কিউইদের পরীক্ষা নেয় সাদমান ইসলাম-নাঈম শেখ জুটি। দলীয় স্কোর যখন ২৭, তখনই বিপদ ডেকে আনেন সাদমান। ১৪তম ওভারে জেমিসনের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দিলেও পারতেন। কিন্তু অলস ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে টম ব্লান্ডেলের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হন তিনি। প্রায় ঘণ্টাখানেক ক্রিজে পড়ে থাকলেও বাঁহাতি ব্যাটার সাজঘরে ফিরেছেন ৪৮ বলে ২১ রানে। তাতে ছিল ৩টি চার। প্রথম ইনিংসে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৭ রান।

এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও উইকেট পেয়ে যাচ্ছিলেন জেমিসন। খোঁচা মারতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু ড্যারিল মিচেল সুযোগটা হাতছাড়া করেছেন। জীবন পেয়ে শান্ত ইনিংস মেরামতে মনোযোগী হয়েছিলেন। নাঈমকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেন ৪৪ রান। লাঞ্চ বিরতির আগে শান্ত আরেকটু ধৈর্য ধরলেই প্রথম সেশনের বিরতিটা একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারতো বাংলাদেশ। নিল ওয়াগনারের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ধরা পরেন বাউন্ডারি লাইনে। আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকা শান্ত ৩৬ বলে ৫ চারে করেছেন ২৯ রান।

লাঞ্চ বিরতির পর মুমিনুল ও নাঈম মিলে সামাল দিচ্ছিলেন ভালোভাবেই। ৩৪ রান যোগ করেন তারা। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় প্রান্ত আগলে খেলা নাঈম মনোযোগ হারিয়ে বসেন দলীয় স্কোর ১০০ ছাড়ালে। টিম সাউদির ফুলার লেংথের বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন। ফলাফল, এজ হয়ে ধরা পড়েন দ্বিতীয় স্লিপে। তাতে শেষ হয় নাঈমের ৯৮ বলে খেলা ২৪ রানের ইনিংস।

দারুণ ইনিংস খেলার পথে ছিলেন মুমিনুলও। কিন্তু নাঈমের মতো একই রকম বিলাসী হওয়ার খেসরাত দিতে হয়েছে তাকে। ওয়াগনারের ফুলার লেংথের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে টেলরের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ৩৭ রানে।

ভীষণ চাপে পড়া বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ে ইয়াসির আলীর বিদায়ে। প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করা এই ব্যাটারকে ২ রানে সাজঘরে ফেরান ওয়াগনার। শর্ট ডেলিভারিকে অস্ত্র বানিয়ে বিপদে ফেলেন ইয়াসিরকে। বল তার ব্যাটে লেগে জমা পড়ে ল্যাথামের হাতে। তারপর দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন লিটন ও নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু মিচেলের বলে সোহান মেরে খেলতে গেলে ভেঙে যায় ১০১ রানের দারুণ এই জুটি। ৫৪ বলে ৩৬ রানে থামেন সোহান। তাতে ছিল ৭টি চার।

এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ৩ রান করে বিদায় নিলে যা একটু আশা হয়ে ছিলেন লিটন। তার বিদায়ের পর হারের আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল শুধু। টেলর টেস্ট ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় উইকেট হিসেবে এবাদতকে তুলে নিলে জয়ের আনন্দে মাতে কিউইরা।

দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার জেমিসন। দীর্ঘদেহী এই পেসার ৮২ রানে নেন ৪ উইকেট। ওয়াগনার ৭৭ রান খরচায় পেয়েছেন ৩ উইকেট। আর একটি করে উইকেট শিকার সাউদি, মিচেল ও টেলরের। ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন টম ল্যাথাম। আর সিরিজসেরা ডেভন কনওয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: প্রথম ইনিংসে ১২৮.৫ ওভারে ৫২১/৬ (ডিক্লে.) (টম ল্যাথাম ২৫২, ডেভন কনওয়ে ১০৯, টম ব্লান্ডেল ৫৭*, উইল ইয়ং ৫৪, রস টেলর ২৮; শরিফুল ইসলাম ২/৭৯, এবাদত হোসেন ২/১৪৩)।

বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংসে ৪১.২ ওভারে ১২৬ (ইয়াসির আলী ৫৫, নুরুল হাসান সোহান ৪১, লিটন দাস ৮, সাদমান ইসলাম ৭, মেহেদী হাসান মিরাজ ৫; ট্রেন্ট বোল্ট ৫/৪৩, টিম সাউদি ৩/২৮, কাইল জেমিসন ২/৩২) ও দ্বিতীয় ইনিংসে (ফলোঅন) ৭৯.৩ ওভারে ২৭৮ (লিটন দাস ১০২, মুমিনুল হক ৩৭, নুরুল হাসান সোহান ৩৬, নাজমুল হোসেন শান্ত ২৯, নাঈম শেখ ২৪, সাদমান ইসলাম ২১; কাইল জেমিসন ৪/৮২, নিল ওয়াগনার ৩/৭৭, রস টেলর ১/০)।

ফল: নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ১১৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতা।

ম্যাচসেরা: টম ল্যাথাম।

সিরিজসেরা: ডেভন কনওয়ে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর