সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে দেড়শ সুটকেস নিয়ে সৌদি আরব চলে গিয়েছিল এবং সেখানে লকার ভাড়া করে নাকি অনেক জিনিস রেখে এসেছিল শোনা যায়। তখন সেটা প্রচার হয়েছিল। আর খালেদা জিয়ার মন্ত্রী বাবর যখন এখানে আসে, এয়াপোর্টে ধরা পড়েছিল কয়েক লক্ষ ডলার নিয়ে। পরে অ্যাম্বাসি থেকে লোক গিয়ে কোনোমতে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়েছিল।
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের এই সমস্ত বদ অভ্যাস তারা সবাইকে, মানে নিজে চোর, সবাইকে ওই রকমই মনে করে। এটা হল তাদের চরিত্র। এই ধরনের কথা তারা ছড়ায়, মনে করে যে এটা বোধহয় খুব প্রচার করতে পারবে। সমালোচনাকারীরা একটা কথা ভুলে যায় যে আমি জাতির পিতার মেয়ে। আমরা দেশের জন্য কাজ করি, আর ক্ষমতাটা আমাদের কাছে দেশসেবা করা, মানুষের সেবা করা। আমরা অর্থ সম্পদের জন্য লালায়িত না। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তাদের সন্তানরা ক্ষমতাটাকে ভোগের জায়গা বানিয়েছে। ক্ষমতাটাকে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়ার জায়গা বানিয়েছে। আর আমাদের কাছে ক্ষমতা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়া। দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস মহামারীকালে এই সফরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চার্টার ফ্লাইট ব্যবহারের ব্যাখ্যাও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের ড্রিমলাইনার, সেটা নিয়েই আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। কেন এসেছি? দুটো কারণ। একটা হচ্ছে যে আমি যদি এই করোনার সময় অন্য এয়ারলাইন্সের টিকেট করি, তাহলে তাদেরকে টাকা দিতে হয়। আর আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক রুটগুলো করোনার কারণে বন্ধ ছিল। আমাদের বিমানগুলো বসেই ছিল। আর একটা বিমান বসে থাকলে তার রক্ষণাবেক্ষণে একটা বিরাট টাকা খরচ হয়। সেজন্যই আমি বললাম, আমরা অন্য এয়ারলাইন্সকে টাকা না দিয়ে আমাদের বিমান নিয়ে আসব। কারণ ওরা তো দেশে বসে আছে। কাজেই আমাদের সাথে আসলো আর ঘরের টাকা ঘরেই থাকল, বিমানই পেল। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে নিউ ইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালুর কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের লক্ষ্য যে নিউ ইয়র্কে অন্তত আমাদের নিজেদের বিমান আসবে। সেটাও আমরা আনতে চাই।আর জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং করার প্র্যাকটিসটাও হয়ে গেল। ভবিষ্যতে তো আসব। কাজেই তার প্র্যাকটিসটা এখানে থেকেই করে গেলাম। বিমানের অবস্থা এক সময়ে ‘ঝরঝরে’ ছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে বিমানের সীমাহীন দুর্নীতি ছিল। এই পর্যন্ত প্রায় ১১টা বিমান আমরা ক্রয় করেছি, আজকে আমাদের ২১টা বিমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ নিয়ে যারা বিদেশে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, এরা আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এরা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করে না। এরা বাংলাদেশের সর্বনাশে বিশ্বাস করে। কেউ কেউ দেখি সমালোচনা করে দূর দেশে বসেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার। আমরা যখন কাজ করে বাংলাদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি, আর এদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশকে কিভাবে খাটো করবে। যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ বলছেন, তারা বিএনপির থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তা করছেন বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারকে আমি দেখি কেউ কেউ অবৈধ সরকার বলে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা এই যে কথাগুলো বলার সুযোগটা পাচ্ছে, এই সুযোগটা কোত্থেকে পাচ্ছে? বিএনপি, জামাত বা ৭৫ এর খুনি, এদের অর্থ দিয়েই তো এরা চলে।
শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে আছে জিয়াউর রহমানের সরকার অবৈধ, এরশাদের সরকার অবৈধ। কারণ মার্শাল ল দিয়ে তারা সরকার গঠন করেছে। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়ে সাজাপ্রাপ্ত, আর তার ছেলে দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে সেই মামলায় ধরা পড়েছে, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ধরা পড়েছে, এমনকি বিদেশে শুধু আমাদের দেশে না আমেরিকার আফবিআইয়ের হাতেই তাদের দুর্নীতি ধরা। যারা জনগণের অর্থ সম্পদ লুট করে, খুন করে অথবা অস্ত্র পাচার করার অথবা গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি, সেই আসামিদের হাতের টাকা খেয়েই তো তারা এই বড় বড় কথা বলে আর তারাই বলে আওয়ামী লীগ অবৈধ।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানে র ক্ষমতা দখলকে আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছে্। অবৈধ সরকারের তাঁবেদারি করে আওয়ামী লীগকে বা আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ বলায় অধিকারটা তাদেরকে কে দিল? জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং বিএনপির যদি শক্তি থাকত তাহলে তারা নির্বাচন করত।