ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার খবর তবুও দাম চড়া

সাগরে মাছ ধরায় বিধিনিষেধ কাটার পরের সপ্তাহে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার খবর মিললেও খুচরা পর্যায়ে এখনও মাছটির দাম নাগালের বাইরে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা বাজার, মেরুল বাড্ডা, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, সেগুনবাগিচাসহ বেশ কিছু বাজারে মাছের দোকানগুলোতে ইলিশ নিয়েই হৈ চৈ বেশি চোখে পড়েছে। বাজারগুলোতে এটির সরবরাহও যথেষ্ট বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। এরপরও দাম কমেনি।
ইলিশের প্রভাব সেভাবে না পড়ায় মাছ বাজারে অন্যান্য মাছের দামও চড়া বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, কয়েক দিন ধরে যে পরিমাণ সরবরাহ বেড়েছে প্রকৃত অর্থে সেই অনুপাতে দাম কমাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আর বিক্রেতারা বলছেন, ইলিশের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে ঠিকই; তবে আড়তে দাম বেশি বলে খুচরাতেও তা আগের মতই চড়া। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে, তখন দাম কমে আসবে বলে ধারণা করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছরের মত এবারও গত ২০ মে থেকে বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এরপর থেকে ইলিশ ধরতে সাগরে ছোটেন জেলেরা। গত কয়েক দিন ধরে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার খবরও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। অথচ এর প্রভাব নেই বাজারে।
ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে দেখা যায়, দেড় কেজি বা এর বেশি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির বেশি এবং দেড় কেজির কম ওজনের দাম এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজির নিচে এবং ৮০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। আর ছোট ইলিশ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের কাছে ‘ককশিট’ ও ‘নদীর’ ইলিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকা থেকে আসা ইলিশ হচ্ছে ককশিটের ইলিশ; এগুলোর স্বাদ কিছুটা কম, দামও কম। আর চাঁদপুর, ভোলা ও বরিশাল এলাকার নদী ও সাগর মোহনায় ধরা পড়ে যেগুলো, সেগুলো হচ্ছে নদীর ইলিশ।
এমন নামকরণের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী মো. রায়হান বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ইলিশগুলো দূর থেকে আসে বলে সেগুলো বেশি পরিমাণ আইস দিয়ে ককশিটের তৈরি বিশেষ বাক্স করে আনা হয়, সেজন্য সেগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ককশিটের ইলিশ। ব্যবসায়ী মো. রাসেল বলছিলেন, বাজারে ককশিটের ইলিশ বেশি, তবে অনেকেই সেগুলোকে নদীর মাছ নামে বিক্রি করছে।
বড় মগবাজারের বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েক মাস পর নতুন ইলিশ উঠেছে, বাজারে গিয়ে দেখলাম সরবরাহও ভালো, কিন্তু দাম বেশি মনে হয়েছে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৭০০ টাকা দাম হাঁকানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও যদি একটি ইলিশ কিনতে এত টাকা লাগে, তাহলে দাম তো নিশ্চয় বেশি বলতে হবে। মৌসুম চলছে, এ সময়ে আরও কমে পাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সেটা হচ্ছে কই।
এদিকে ইলিশের দাম হাতের না নাগালে না আসায় বাজারে অন্যান্য মাছও আগের মতই বেশি দামে বিক্রি হ্চ্ছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।বাজার ও আকারভেদে প্রতি কেজি চাষের টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। আকারভেদে বেলে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, পাবদা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই ৩২০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অপরদিকে শিং ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, শোল ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, আইড় মাছ ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, কই মাছ ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৯০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।