মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

জয়নাল হাজারীর মৃত্যু: আলোচিত রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১১১ বার
আপডেট : সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার জন্মভূমি ফেনীতে।

১৯৪৫ সালের ২৪ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করা জয়নাল হাজারী ৭৬ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত এ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের অবসান হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করা এই রাজনীতিকের রয়েছে নানা আখ্যান।

১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় বিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এর আগে বৃহত্তর নোয়াখালী, ফেনীর ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতির প্রতিটি পর্যায়ে ছিল হাজারীর দীপ্ত পদচারণা।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিনবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। তার অসুস্থতার জন্যে চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রাণ তহবিল থেকে হাজারীকে ৪০ লাখ টাকার অনুদান দেন।  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

আলোচনার পাশাপাশি এ রাজনীতিকের রয়েছে সমালোচনাও। জয়নাল হাজারী ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হবার পর, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফেনীতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়। এই পেক্ষাপটের পেছেনে হাজারীকে সন্দেহ করা হয় এবং ২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৬ আগস্ট রাতে হাজারীর বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এ সময় তিনি ফেনীর ‘গড ফাদার’ আখ্যা লাভ করেন।

এরপরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এপ্রিল, ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন হাজারী। চার বছর পর ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের পর নানান কারণে আলোচনায় উঠে আসেন জয়নাল হাজারী।

জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত সমালোচনা, তার কতটুকু প্রচার এবং কতটুকু অপপ্রচার তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম প্রশ্ন রয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়নাল হাজারীর বাড়িতে অভিযানের কী উদ্দেশ্য ছিল, সেটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বিরাট অমীমাংসিত প্রশ্ন।

ওই অভিযানের পর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, দুর্বৃত্তরা সব পালিয়ে গেছে। অর্থাৎ সরাসরিই তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অবস্থান নিয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান দিয়েই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাঠ থেকে প্রায় বের করে দেওয়া হয়েছিল।

২০০১ এর পর থেকে জয়নাল হাজারীর রাজনৈতিক জীবনের সূর্য অস্তমিত হতে শুরু করে। এখন তিনি আর মূলধারার রাজনীতিতে নেই। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে দুর্বৃত্তায়ন এবং সন্ত্রাসের চক্র থেকে বেরিয়ে একটা সুস্থ ধারার রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরির চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা। যারা বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তাদের দলের জন্য অনেক অবদান থাকলেও শেখ হাসিনা তাদের দলে প্রশ্রয় দেননি। দলে কোনো বড় পদ পদবিও দেননি।

তবে জয়নাল হাজারীর মতো নেতাদের দলের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা, সেই ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। তাদের আকাঙ্ক্ষাকে শেখ হাসিনা সবসময় শ্রদ্ধা করেন। এ কারণেই আবার অসুস্থ জয়নাল হাজারীকে তিনি ডেকে আনেন গণভবনে। তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর