বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর বিএনপির এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
সম্প্রতি চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষে জড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে গিয়েও ওই যে মারামারি করল বিএনপি…বিএনপি জানে না যে সেখানে জিয়ার কবর নাই? জিয়া নাই ওখানে? জিয়ার লাশ নাই? তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন?”
ফখরুল বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) তার (জিয়াউর রহমান) মাজার সম্পর্কে কথা বলেছেন, তার একাত্তর সালের যুদ্ধের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেছেন। একটা হাস্যকর বক্তব্য তিনি(প্রধানমন্ত্রী) রেখেছেন।”
তিনি বলেন, “এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে থেকেই যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। তিনি যেদিন শাহাদাত বরণ করেন, সেদিন এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ তার জন্য কেঁদেছিল। মানিক মিয়া এভিনিউতে তার জানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি কত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন।”ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, ভোটের অধিকার লুট করেছে, বাংলাদেশকে একটা তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”
এই পরিস্থিতিতে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সংগ্রামের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “আজকে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য দরকার। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে সেই গণঐক্য গড়ে উঠবে। সেই ঐক্যের মধ্য আমরা বাধ্য করব এই গণবিরোধী সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে।”
২১ অগাস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি ‘চক্রান্ত’ ছিল দাবি করে ‘ইতিহাস কথা কয়’ ব্যানারে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
২১ অগাস্ট নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২১ অগাস্ট এবং ১/১১ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১/১১ ঘটানোর জন্য ২১ অগাস্ট ছিল একটা প্রাথমিক চক্রান্ত। ঝুঁকিটা বড় ছিল।”
বিএনপি আমলে সংঘটিত ওই হামলা নিয়ে ফখরুল বলেন, “খালেদা জিয়া তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন এবং বেগম খালেদা জিয়া তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতার (শেখ হাসিনা) বাসায় যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হয়নি, বাধা দেওয়া হয়েছিল।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হয় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী, আহত হয় কয়েকশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২১ অগাস্ট ছিল সম্পূর্ণভাবে একটা সাজানো নাটক এবং সাজানো নাটকের ফলেই আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় বসে আছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে পারি, ওই ঘটনার বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেই কারণে আজকে তারা এটাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চায়।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “যে সময়ে ঘটনা ঘটেছে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করেছিলেন। তদন্ত যাতে নিরপেক্ষ হয় এবং আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হয়, সেজন্য তিনি এফবিআই ও ইন্টারপোলকে আহ্বান করেছিলেন, তারা দেশে এসেছিল।
“কিন্তু যারা ভিকটিম, তারা কিন্তু সহযোগিতা করেনি। যারা সহযোগিতা করলেন না, তারাই আজকে ইতিহাসকে বিকৃত করে বলতে চায়, বিএনপি সরকারে ছিল সে সময় তদন্ত হয়নি, নাটক হয়েছে ইত্যাদি।”
২১ অগাস্টের মামলার রায়ে ‘সুবিচার’ হয়নি বলেও দাবি করেন খন্দকার মোশাররফ।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।