মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

জাতির পিতা বিশেষ দলের সম্পত্তি নয় : সংসদে জিএম কাদের

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৩৩৩ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, জাতির পিতা কোনও বিশেষ দলের নিজস্ব সম্পদ নয়। তিনি এ দেশের সব দলের সব মানুষের জাতির পিতা। তাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইলে তার সর্বজনীন চরিত্রকে খাটো করা হয়। বিশ্বে অনেক দেশে জাতির পিতাকে যেভাবে স্বর্বজনীনভাবে সম্মান দিয়ে রাখে, আমাদেরও সেভাবে জাতির পিতাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের শেষ অংশে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা  গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ঐক্য। ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’ আমরাও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সহমত পোষণ করি। দেশ থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতি সমূলে বিনষ্ট করতে হবে। প্রয়াত কিংবা জীবিত জাতীয় নেতানেত্রী, রাষ্ট্রনায়কদের প্রতি সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। কেউ যদি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতাকে অসম্মান বা গালি দিয়ে কথা বলেন, তিনি নিজে তার নেতা-নেত্রীর প্রতি পাল্টা অসম্মান করার সুযোগ সৃষ্টি করেন।

জিএম কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম নিয়ে অনেকেই মুখে কাঁদেন, কিন্তু সবাই কী তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করেন? বঙ্গবন্ধু তো দুর্নীতি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আজকে করাপশনের কথা বলতে হয়। এ বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষক করে না। করাপশন বাংলার মজদুরা করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ। যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আজ যেখানে যাবেন, করাপশন দেখবেন— আমাদের রাস্তা খুঁড়তে যান করাপশন। খাদ্য কিনতে যান করাপশন, জিনিস কিনতে যান করাপশন। বিদেশে গেলে টাকার ওপর করাপশন। তারা কারা? আমরা যে ৫ পারসেন্ট শিক্ষিত সমাজ, আমরা হলাম দুনিয়ার সবচেয়ে করাপ্ট পিপল, আজ আমরাই করি বক্তৃতা! আমরা লিখি খবরের কাগজে, আমরাই বড়াই করি। এভাবে সত্য কথা বলতে পারতেন বলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলার মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পেরেছিলেন।

কাদের বলেন, আজ  আমরা এক সুন্দর-অসুন্দরের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি। একদিকে উন্নয়নের চাকা এগিয়ে চলছে, আরেক দিকে দুর্নীতি আমাদের পিছিয়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা, যার মূলে ছিল শাসকরা, প্রশাসনের মাধ্যমে শাসনের নামে জনগণকে শোষণ করবে। সেটাকে ভেঙে জনগণের নির্বাচিত শাসকরা প্রশাসনের নিম্নতম ইউনিট পর্যন্ত প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণকে সেবা করবে- শোষণ নয়, সে ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলেন, সে উদ্দেশ্যে তিনি (বঙ্গবন্ধু) মহাকুমাকে জেলা করে তার প্রধান করেছিলেন জনপ্রতিনিধিদের। তাদের অধীনে প্রশাসনকে ন্যস্ত করে তাদের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক শাসন নিশ্চিত করেছিলেন। এ ব্যবস্থায় কখনই শোষণ হবে না, হবে সেবা। আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপজেলা ও জেলা পরিষদ প্রবর্তন করেছিলেন অনেকটা সেই ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর সেই ভাবধারা ধরে রাখেনি বা ধরে রাখার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বের পরিবর্তে প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত। সেখানে সেবার পরিবর্তে শোষণের সুযোগ থাকে। কেননা, সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করার কোনও ব্যবস্থা নেই। করতে হয় না। এ বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর ধ্যান ধারনার ব্যত্যয় বলে মনে করি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, তবে দু’একটি কথা না বললেই নয়। আমরা বিরোধী দল আমাদের অবস্থানে থেকে সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে সরকারকে সেগুলো সম্পর্কে সজাগ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যগুলোর  মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছিল— মানুষে মানুষে বৈষম্যের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সাধারণ জনগনেণের অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি। এসব উদ্দেশ্য সফল করার জন্যই ৫০ বছর আগে পাকিস্থানিদের থেকে আলাদা হয়েছিলাম, স্বাধীন হয়েছিলাম আমরা। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও  সম্পূর্ণভাবে তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। না হলে এখনও জনগণকে দাবি করতে হয় নির্বাচন ব্যবস্থা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা যেটা অভিযোগ পাচ্ছি— আমাদের যারা প্রার্থী তারা সব সময় আমাদের কাছে একটা কথাই বলছেন— আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা অন্য কোনও সুযোগ সুবিধা চাই না। আমরা যাতে সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারি, সেই ব্যবস্থা চাই। তার মানে এই ব্যবস্থাটি এখন কাজ করছে না।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ থাকলে কখনোই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।  দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। আমি মনে করি, সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ থাকলে কোনও সময়েই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। আজ আমরা আনন্দ উৎসাহ নিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। আমি চাই, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি আনন্দ উৎসাহ নিয়ে যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম  স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী উদযাপন করতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর