শিরোনাম :
জলবায়ু নিয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বে কাজ করতে চায় সার্কভুক্ত দেশগুলো
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি আদায়ে এক জোট হয়ে কাজ করতে চায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বাংলাদেশের নেতৃত্বে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে জোরালোভাবে দাবি আদায়ের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন সার্কভুক্ত দেশগুলোর পরিবেশ মন্ত্রীরা। কপ-২৭ সম্মেলনের চতুর্থ দিনে বুধবার মিসরের শার্ম আল শেখে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ মন্ত্রীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে সকালে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। এতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক এগিয়েছে কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি না পাওয়ার কারণে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। তিনি জানান, ২০৪১ সালে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির টার্গেট থাকলেও বাস্তবায়ন হয়তো কিছুটা কম হবে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটি বড় উৎস। বাংলাদেশে এটির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালাইন্সের মহাপরিচালক ড. অজয় মাথুর। সোলার খাতকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করতে এ বছরই বাংলাদেশ পরিদর্শনে যাবেন তিনি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এ সময় বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে চায়। অল্প জায়গা ব্যবহার করে কীভাবে পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালাইন্সের মহাপরিচালক বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ একটি বড় উৎস। আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালাইন্স বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণে কম ভূমিকা রাখলেও এ ধরনের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি। পরে একই ভেন্যুতে সাউথ এশিয়ান এনভায়রনমেন্ট মিনিস্টারস মিটিংয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পাকিস্তানের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সিনেটর সেরি রেহমান, শ্রীলঙ্কার পরিবেশ মন্ত্রী নাসির আহমেদ, নেপালের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী উমা রেগমি, বাংলাদেশের পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার ও পরিবেশ সচিব ড. ফারহিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত একই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছি।’
শ্রীলঙ্কার পরিবেশ মন্ত্রী নাসের আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের দাবি উন্নত বিশে^র কাছে জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে। এ বিষয়ে আজকের এই বৈঠকে আমরা জোর দিয়েছি।’
পাকিস্তানের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সেরি রেহমান বলেন, ‘জলবায়ু সংকট দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কমন সমস্যা। এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। পরস্পরের মধ্যে আরও সৌহার্দ্য স্থাপন করতে হবে।’
নেপালের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী উমা রেগমি বলেন, ‘বন্যা, খরা ও বায়ুদূষণে নেপাল আক্রান্ত হলে একই সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা একজোট না হলে উন্নত বিশ^ আমাদের কথা শুনবে না। এ জন্য আমরা আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। এরপরে আরেকটি সভায় জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বিভিন্ন দেশের কাছে তুলে ধরে বাংলাদেশ।’
জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা এবং সিইজিআইএসের যৌথ উদ্যোগে শেয়ারিং অব ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান-ন্যাপ অব বাংলাদেশ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবগুলোর ঝুঁকিসমূহ হ্রাস করতে বিশেষ উন্নয়ন কৌশল তৈরি, অভিযোজন সক্ষমতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং নতুন ও বিদ্যমান নীতি ও কর্মসূচিগুলোকে সহনীয় করা। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি) অনুযায়ী, ১২৯টি উন্নয়নশীল দেশ তাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
পরিবশে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমরা কপ-২৬-এর কাছ থেকে বৈশি^ক উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে অঙ্গীকার আদায় করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা করতে পাইনি। বৈশি^ক কার্বন উদগীরণ কমানোর যে সীমা সেখান থেকে এখনও অনেক দূরে রয়েছি আমরা। উন্নত বিশ^ অভিযোজন অর্থায়ন নিয়ে যে তালবাহানা শুরু করেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং পূর্বে প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিতরণের ঘাটতি পূরণ করতে হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন চাহিদা বিচেনায় নিয়ে অন্তত বার্ষিক ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন প্রদান করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
Leave a Reply
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর