শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন

কর্মস্থলের উদ্দেশে যাত্রা হাজারো পোশাকশ্রমিকের

রিপোর্টার / ২৮২ বার
আপডেট : শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

১ আগস্ট খুলছে পোশাক কারখানা। কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় হাজার হাজার শ্রমিক গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে ফিরতে শুরু করেছেন। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পিকআপ, ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও রিকশায় বাড়ি থেকে রওয়া হয়েছেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে ছুটছেন গন্তব্যের পথে। আবার অনেকে গাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন দীর্ঘক্ষণ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি থাকলেও এসব শ্রমিকের কাছে চাকরি রক্ষা করাটা বেশি প্রয়োজন বলে জানান তারা।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় পোশাক শ্রমিকদের ভিড়। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহের নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছেন তারা। পায়ে হেঁটে, রিকশায়, অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন।

20210731_083141সাইদুল ইসলাম ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বড়পুটিয়ার গ্রামের বাসিন্দা। চাকরি করেন গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজারের মণ্ডল পোশাক কারখানায়। তিনি জানান, শনিবার ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি বাড়ি থেকে রওনা হন। কোথাও তিনি যাত্রীবাহী বাসের দেখা পাননি। কখনও সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, কখনও ভ্যানে, আবার কখনও হেঁটে শ্রীপুরের মাষ্টারবাড়ী এসে পৌঁছান।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেখৈরহাটি গ্রামের রাবেয়া আক্তার। গাজীপুর সদর উপজেলার ইউটা পোশাক কারখানায় সুইং অপারেটর পদে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছি। কারখানা খুলে গেছে তাই যাচ্ছি। আজ কারখানায় উপস্থিত না হতে পারলে যে কয়দিন ছুটি পেয়েছি সে কয়দিন অনুপস্থিত দেখাবে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই কারখানায় যাচ্ছি।’

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার রফিকুল ইসলাম গাজীপুরের নোমান শিল্প গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার সহকারী অপারেটর পদে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘শনিবার (৩১ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টায় স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হন কর্মস্থলের উদ্দেশে। কোনও যানবাহন না পেয়ে প্রথমে হেঁটে, আবার রিকশায় এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে সকাল ১০টায় মাওনা চৌরাস্তা পৌঁছেছি।’

20210731_081209যেখানে নির্দেশনা রয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার, সেখানে শ্রমিকেরা গাদাগাদি করে রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে চড়ে গন্তব্য রওনা হচ্ছেন। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ বেশ কয়েকজন পোশাক শ্রমিক জানান, করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেও ও চাকরি হারানোর ভয়ে আজই ঢাকায় যাচ্ছেন তারা। এ পর্যন্ত কয়েকটি গাড়ি পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা সদরের শাহপাড়া এলাকার আবু সাঈদ। সাভারের আশুলিয়ার (জামগড়া) এলাকায় একটি পোশাককারখানায় চাকরি করেন করেন। তিনি জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সরকার একদিকে গণপরিবহন বন্ধ করেছে, অপরদিকে পোশাক কারখানা খোলা রেখেছে। এতে কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পোশাক কারখানা বন্ধ রাখলে এই ভোগান্তির শিকার হতে হতো না।’

গাজীপুরের স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসে চাকরি করেন করেন জয়নুল আবেদীন। এ পোশাককর্মী বলেন, ‘আগামীকাল সময়মতো যদি গার্মেন্টেসে পৌঁছাতে না পারি তাহলে চাকরি থাকবে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি।’

আরেক শ্রমিক বজলু মিয়া বলেন, ‘হাতে টাকাপয়সা নেই। কোনও সহায্য সহযোগিতাও পাইনি। তাই কাজে যোগ দিতে গাজীপুর এসেছি।’ করোনার ভয়বহতার সময় কাজে যোগ দিতে এসেছেন, কিন্তু মাস্ক বা হাতে গ্লাভস নেই কেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ এগুলো পরে কী হবে। করোনার ভয় আমাদেরও আছে। কিন্তু কী করার আছে? মালিকপক্ষ গার্মেন্টস খুলছে, তাদের কথামতো কাজে যোগ না দিলে বেতন পাবো না। যদি ছাঁটাই করে, তখন তো আরও বিপদে পড়বো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য উৎপাদন করে শিপমেন্ট না করতে পারলে এয়ার শিপমেন্ট করতে হবে। এতে প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।’

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘হাজারও শ্রমিক আসছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। পরিবহন বন্ধ। এর মধ্যে যে কয়েকটা ছোট ছোট পরিবহন সড়কে আছে, সেখানে ভিড়ের জন্য পা ফেলা যাচ্ছে না। এর মধ্যেও আমরা তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। মাইকিং করছি, হাত ধোয়ার, মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। আজকের পর ভিড় থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর