বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মুক্তিযুদ্ধে নৌ-কমান্ডোদের বীরত্বগাথা নিয়ে লেখা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিএনপি মহাসচিবকে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।
জিয়েউর রহমানকে নিয়ে মন্ত্রী মোজাম্মেলের এক বক্তব্যের পাল্টায় ফখরুল বলেছিলেন, “আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন কি না তা প্রমাণ করতে হবে।
তার কথার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, “এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং গাজীপুরের বিএনপি নেতাদের কাছ থেকেই জেনে নিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবকে পরামর্শ দিচ্ছি।
“আর উনার (মির্জা ফখরুল) এবং উনার পরিবারের মুক্তিযুদ্ধের সময় কী ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখতেও আপনাদের (সাংবাদিক) অনুরোধ জানাচ্ছি।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে তার লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম এখন রাজনীতি। তার মধ্যেই মন্ত্রী মোজাম্মেল গত সোমবার বলেছিলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানের কবরে জিয়ার লাশ নেই। আর সংসদ ভবন এলাকার নকশাবহির্ভূত সেই কবর সরানো হবে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জিয়ার জড়িত থাকার ‘দালিলিক প্রমাণ’ থাকায় তার মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের কথাও বলেছিলেন তিনি। তার জবাবে ফখরুল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীকে নিয়ে কথা বলেছিলেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ মুহুর্তে ১৯ মার্চ গাজীপুরে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে জনতার সশস্ত্র প্রতিরোধে নেতৃত্বে ছিলেন। এই সশস্ত্র প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক এবং কোষাধ্যক্ষ ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, যিনি এখন বিএনপির নেতা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মন্ত্রী মোজাম্মেল বুধবারও বলেন, বিএনপি জিয়ার লাশ নিয়ে ‘মিথ্যাচারের রাজনীতি’ করছে। তিনি বলেন, “ব্যক্তি জিয়ার সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই, তবে ইতিহাসের বিকৃতি চাই না। চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ নেই, অথচ সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন, ইতিহাসের এমন বিকৃতি হতে দেওয়া যায় না।” ওই কবরে জিয়ার লাশ থাকলে ডিএনএ টেস্ট করে তা প্রমাণের জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।“জিয়াউর রহমান সাধারণ কোনো নাগরিক ছিলেন না, তিনি যেভাবেই হোক রাষ্ট্রপতি ছিলেন। কাজেই তার ওই সময়ের কোনো ছবি থাকবে না, এটা হতে পারে না।”
সংসদ ভবনের আশপাশ থেকে জিয়ার কবরসহ নকশা বহির্ভূত সব স্থাপনা ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে’ সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, নৌযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অপারেশন ছিল ১৯৭১ সালের ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এতে আকাশবাণীর গানের সঙ্কেতের মাধ্যমে বিভিন্ন বন্দরে একযোগে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৬টি জলযান মাইনের আঘাতে ডুবিয়ে দেয় বাংলার নৌ-কমান্ডোরা। এর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্যই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হবে।
গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া, ‘অপারেশন জ্যাকপট’ গ্রন্থের লেখক মো. শাহজাহান কবির বীর প্রতীকসহ নৌ-কমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।